মাও-ভীতির চেয়েও বড় সমস্যা সড়ক-ছিনতাই, বললেন ফেলুদা
রণ্যসুন্দরী ঝাড়গ্রাম সম্পর্কে বাইরের লোকজনের এখনও এত ভীতি কেন?
প্রশ্নকর্তা কবি শুভ দাশগুপ্ত যেন জিজ্ঞাসু তোপসে! শীতের রাতে ধূমায়িত চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ফেলুদার জবাব, “মাওবাদীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ভয়-ভয় ব্যাপারটার চেয়েও আরও বড় সমস্যা আছে। ঝাড়গ্রামের জঙ্গল রাস্তায় যানবাহন থামিয়ে লুঠপাটের ঘটনা তো সেই আদিক্যাল থেকে চলে আসছে।” প্রসঙ্গ পাল্টে এ বার কবির আক্ষেপ, “শাল-সবুজে ঘেরা লালমাটির ঝাড়গ্রামকে ঘিরে পর্যটন-শিল্প গড়ে ওঠার সব রকম সম্ভাবনা থাকলেও সে ভাবে কিছুই তো গড়ে ওঠেনি।” ফেলুদা জানালেন, শান্তিনিকেতনের সঙ্গে ঝাড়গ্রামের মিল খুঁজে পান তিনি। “বছর পাঁচেক আগে ঝাড়গ্রামে ‘টিনটোরেটোর যিশু’র শু্যটিং করে গিয়েছি। ‘মহুলবনির সেরেঙ’-এর আউটডোরেও ঝাড়গ্রামে এসেছিলাম। আরও দু’টো ছবির কাজে এখানে এসেছিলাম...দারুণ জায়গা। শু্যটিং করার অসাধারণ সব স্পট রয়েছে” বললেন পর্দার ‘ফেলুদা’ সব্যসাচী চক্রবর্তী।
একান্ত আলাপচারিতায় সব্যসাচী চক্রবর্তী, শ্রীকান্ত আচার্য ও শুভ দাশগুপ্ত। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
নতুন বছরের প্রথম দিন রবিবার থেকে শুরু হয়েছে ঝাড়গ্রাম অ্যার্ট অ্যাকাডেমির ছবি ও কারুকলা বিষয়ক সাত দিনের বার্ষিক প্রদর্শনী ও মেলা‘রঙ-মাটি-মানুষ’। মঙ্গলবার রাতে মেলা প্রাঙ্গণ-লাগোয়া আর্ট অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ সঞ্জীব মিত্রের বাড়ির দোতলার আটপৌরে বৈঠকখানায় ‘সেলিব্রিটি আড্ডায়’ শুভ ও সব্যসাচী ছাড়াও ছিলেন গায়ক শ্রীকান্ত আচার্য, সুরকার কল্যাণ সেন বরাট, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস সরকার প্রমুখ। সেই আড্ডার একমাত্র শ্রোতা ছিল আনন্দবাজার। আড্ডার সূত্রধর শুভ দাশগুপ্ত বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত ঝাড়গ্রামে আসছেন। গত তিন বছরের অশান্তির পর পরিস্থিতি যে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে, সেই প্রসঙ্গ ওঠে আলোচনায়। পর্যটনকে ঘিরে ঝাড়গ্রামের মূলবাসীদের কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন শুভ দাশগুপ্ত। কলকাতা থেকে গাড়িতে বা ট্রেনে আড়াই-তিন ঘন্টার দূরত্বের অরণ্যশহরটি ‘উইক-এন্ড’ কাটানোর পক্ষে আদর্শ বলে মনে করেন কবি। কাঁকড়াঝোরের রাস্তায় মেঘ-ছোঁয়া পাহাড় দেখে বহু বছর আগে মোহিত হয়েছিলেন সব্যসাচী। ফেলুদার স্মৃতি-কথায়, “সিকিমের সঙ্গে অনায়াসে বেলপাহাড়ির কয়েকটা পাহাড়ি জায়গার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে বেশ কয়েক বছর আগে কাঁকড়াঝোর যাওয়ার পথে খারাপ রাস্তার জন্য সে বার আমাদের গাড়ি আটকে সে এক বিপত্তি হয়েছিল!”
তবে ’৯৫ সালের তুলনায় ২০১১-১২ সালে রাস্তাঘাটের কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন সব্যসাচী। বেশ কয়েক বছর আগে ঝাড়গ্রামে অনুষ্ঠান করতে এসে শহরের বনানী অতিথিশালায় উঠেছিলেন শ্রীকান্ত। সেই বনানী এখন সিআরপি ক্যাম্প। ঝাড়গ্রামে পর্যটকদের জন্য স্বল্প খরচে উপযুক্ত থাকার লজ-হোটেলের সংখ্যা হাতে গোনা। কলকাতা-ঝাড়গ্রামের মধ্যে নির্দিষ্ট সময় অন্তর আরও বেশি সংখ্যক ট্রেন চালানো দরকার এবং খড়্গপুরের চৌরঙ্গি থেকে লোধাশুলি পর্যন্ত ৬ নম্বর জাতীয় সড়কটির সম্প্রসারণ ও সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন সব্যসাচীরা। শ্রীকান্তর বক্তব্য, “শুধুমাত্র পর্যটন-পরিকাঠামোর খোলনলচে বদলালেই হবে না। সবার আগে এখানে যাঁরা বেড়াতে আসবেন তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। রাস্তাঘাট নিরাপদ না হলে কোন ভরসায় ট্যুরিস্টরা এখানে আসবেন?” শ্রীকান্তর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন সকলেই। মোবাইল হাতে ‘ফেলুদা’ বলে ওঠেন, “আমি শুরুতেই তো বলেছিলাম, সড়ক-ছিনতাইয়ের ব্যাপারটা খুবই সিরিয়াস!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.