|
|
|
|
‘ছোট আঙারিয়া দিবস’ রইল অন্তরালেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
২০০১-এর ৪ জানুয়ারি গড়বেতার ছোট আঙারিয়া গ্রামে হামলা হয়েছিল তৃণমূল কর্মী বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে। গুলিচালনা, অগ্নি-সংযোগ, বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েক জন নিহত হন এবং তাঁদের দেহগুলি লোপাট করা হয় বলে অভিযোগ। হামলা-খুন-দেহ লোপাটে অভিযুক্ত সিপিএম। ওই ঘটনা সে বারের বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত পশ্চিম মেদিনীপুরের রাজনীতিতে নির্ণায়ক হয়ে ওঠে। কেশপুর-গড়বেতাকে কেন্দ্র করে তার আগের দু’তিন বছরে সিপিএমের বিরুদ্ধে তৃণমূলের যে ‘লড়াই’, তা মুখ থুবড়ে পড়ে। বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় ফেরে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। আরও পাক্কা এক দশক ক্ষমতাসীন থাকে তারা। ধামাচাপা পড়ে যায় ছোট আঙারিয়া মামলা। ‘প্রমাণাভাবে’ খালাস পেয়ে যান তপন ঘোষ, সুকুর আলি-সহ অভিযুক্তরা।
সাত মাস আগে পালাবদল হয়েছে রাজ্যে। ক্ষমতা হারিয়েছে সিপিএম। ক্ষমতায় এসেছে সেই তৃণমূল। ধামাচাপা অনেক মামলাই নতুন করে শুরু হয়েছে। ছোট আঙারিয়াও ব্যতিক্রম নয়। এক দশক ধরে ফেরার দিল মহম্মদ এখন জেলে। বিচার শুরুর অপেক্ষায়। সিবিআই-ও নতুন করে তদন্ত করেছে। এক সময়ে বিগড়ে যাওয়া সাক্ষী বক্তারও নতুন করে জবানবন্দি দিয়েছেন সিবিআইয়ের কাছে। এত কিছুর পরেও বুধবার, ছোট আঙারিয়া-কাণ্ডের ১১তম বর্ষপূতি রয়ে গেল খানিক অন্তরালেই। পালাবদলের সুযোগে ইদানীং পুরনো নানা ঘটনা ‘বড় করে’ স্মরণের হিড়িক পড়ে গিয়েছে তৃণমূল-শিবিরে। সেই আবহে ছোট আঙারিয়ার ‘ব্যতিক্রম’ নজর এড়াচ্ছে না। স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উদ্যোগেই নমো নমো করে পালিত হল ‘ছোট আঙারিয়া দিবস’। বক্তারের বাড়ির অদূরেই স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বক্তার বললেন, “সে দিনের কথা ভুলতে পারব না। এক সময়ে সিপিএমের ভয়ে মুখ খুলতে পারিনি। তবে এখন সেই পরিস্থিতি নেই। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।” একেবারে শেষ মুহূর্তে হাজির হন দলীয় বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো।
এ দিনই গড়বেতার বাঁশদায় এসেছিলেন সাংসদ তথা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। কিন্তু ছোট আঙারিয়ায় যাননি। গড়বেতায় দলের ভিতর দ্বন্দ্ব, নেতৃত্বহীনতাকেই ‘ছোট আঙারিয়া দিবস’ বড় করে পালন না হওয়ার ‘কারণ’ বলে মনে করছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের একাংশ কর্মী। জেলার রাজনৈতিক মহলে আরও একটি গুঞ্জনও অবশ্য রয়েছে। আর তা হলসে দিনের ঘটনায় তৃণমূল-সঙ্গী হিসাবে তদানীন্তন সিপিআই (এমএল) জনযুদ্ধের নাম জড়িয়েছিল। হতাহতদের পরিচয়েও জনযুদ্ধ-যোগের বিষয়টি উঠে এসেছিল। শাসক হয়ে ওঠার পরে দলের পক্ষে সেই যোগাযোগের প্রসঙ্গ বিড়ম্বনার হতে পারে ভেবেই তৃণমূল নেতৃত্ব এই ‘দিবস’ নিয়ে বেশি হাঁকডাক করেননি বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “নতুন করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরাও চাই দোষীদের শাস্তি হোক। স্থানীয় কর্মী-সমর্থকরাই ঘটনার বর্ষপূর্তি পালন করেছেন। বিধায়ক তো উপস্থিত ছিলেনই।”
এ দিন সুব্রতবাবু গিয়েছিলেন বাঁশদায় ‘অস্বাভাবিক ভাবে মৃত’ দলের এক কর্মীর পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে। সোমবার সকালে আজিজুল মল্লিকের বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের বক্তব্য ছিল, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা থেকেই খুনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তৃণমূলের দাবি, খুনের পিছনে সিপিএমের হাত রয়েছে। আজিজুল দলের সক্রিয় কর্মী। গ্রামে সিপিএমের কিছু কাজে দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন বলেই তাঁকা খুন করা হয়েছে। আজিজুলের পরিজনেদের সান্ত্বনা দেন সুব্রতবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক তাপস রায় এবং দলের জেলা নেতৃত্ব। এই নেতাদের এক জনও ছোট আঙারিয়া না যাওয়ায় খানিক হতাশ হন সেখানকার তৃণমূল কর্মীরা।
|
|
|
|
|
|