|
|
|
|
ক্যাম্প-কাণ্ডে আতঙ্ক বাড়ছে গ্রামবাসীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শীলাপাড়া (লালগড়) ও মেদিনীপুর |
লালগড়ের বেলাটিকরি অঞ্চলের শীলাপাড়া সিআরপি ক্যাম্পে নিজেদের মধ্যে বিবাদের জেরে ৩ জওয়ান নিহত হওয়ার পরে ফের আশঙ্কায় জঙ্গলমহলবাসী। আপাত মাওবাদী-মুক্ত ‘শান্তির জঙ্গলমহলে’ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের এই আচরণের প্রেক্ষিত যাই হোক, তা পুলিশ-প্রশাসনেরও অস্বস্তি বাড়িয়েছে। এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় বাহিনীর তরফে জঙ্গলমহলের সব ক’টি ক্যাম্পের কম্যান্ডিং অফিসার (সিও)-দের সতর্ক করা হয়েছে। জওয়ানদের মধ্যে কোনও বিষয় নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলে তা খতিয়ে দেখে অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে সিও-দের।
|
|
শীলপাড়ার সেই সিআরপি ক্যাম্প। |
এলাকাবাসীর একাংশের অবশ্য বক্তব্য, এই ঘটনা যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি নিয়েই নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই জওয়ানেরা ‘রাগি’। সামান্য সন্দেহেই লোকজনদের আটক করে জেরা করেন। ‘বেচালপনা’ দেখলে কখনও সখনও মারধরও করেন। তবে টহলে যাওয়া-আসার পথে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কোনও কোনও ‘ভদ্র’ জওয়ান নিয়মিত বিনিময়ও করতেন। যেমন মঙ্গলবার রাতে নিহত আর কুমার (৩৭, আদতে তামিলনাড়ুর বাসিন্দা)। আবার ‘হাবিলদার’ আর তুলসীধরন (৪৩, বাড়ি কেরলে) যে সহকর্মীদের গুলি করে খুন করতে পারেন, আত্মঘাতী হতে পারেনতাও অবিশ্বাস্য অনেকের কাছেই। নিহত অন্য জওয়ান রিয়াজ আহমেদ ভাট (২৯, বাড়ি অনন্তনাগ, জম্মু-কাশ্মীর) তুলনায় কম পরিচিত।
এক বৃদ্ধ জানান, সন্ধের পর পথেঘাটে লোকজন থাকে না। ক্যাম্প থেকে নিকটতম বসতি আড়াইশো মিটার দূরে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ চার-পাঁচবার গুলির শব্দ শুনতে পান। দেড়-দু’কিলোমিটার দূরের বাসিন্দারাও ওই শব্দ শোনেন। এক বধূ বলেন, “মাঝেমধ্যেই মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ সন্দেহে লোকজনকে ক্যাম্পে ধরে এনে জেরা করত জওয়ানেরা। আমরা ভেবেছিলাম, তেমনই কোনও কারণে মাওবাদীদের সঙ্গে জওয়ানদের গোলাগুলি হচ্ছে।” নিঃস্তব্ধ রাতে ক্যাম্পে শোরগোলের আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পান আশোপাশের বাসিন্দারা। যাঁদের বাড়িতে টিভি রয়েছে তাঁরা অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই জেনে যান ঠিক কী ঘটেছে। এর পরেই মুখে মুখে এবং মোবাইল ফোনে রটে যায়, জওয়ানেরা নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করছে। তাতে উৎকণ্ঠার পারদ বাড়ে এলাকাবাসীর। বাসিন্দাদের বক্তব্য, জওয়ানেরা নিজেদের মধ্যেই এমন প্রাণঘাতী বিবাদে জড়ালে সাধারণের বিপদ তো আরও বেশি! |
|
নিহত জওয়ানদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা। |
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, বুধবার শীলাপাড়া ক্যাম্পের ভিতরের মন্দির থেকে প্রতিদিনের মতো ভোরবেলার ধর্মীয় সঙ্গীত বাজানো হয়নি। রুটিন টহলেও বের হননি জওয়ানেরা। ক্যাম্পের বিভিন্ন সেন্ট্রি পোস্টে ও ব্যাঙ্কারের আড়ালে পাহারায় ছিলেন জওয়ানেরা। বাইরে থেকে ক্যাম্পের ছবি তোলা হলে কেউ বাধা দেননি। এমন সুনসান ক্যাম্প-চত্বর আগে কখনও দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার সারারাত পুলিশ ও সিআরপির অজস্র গাড়ি ক্যাম্পে আসতে দেখেছেন গ্রামবাসীরা। ভোররাতে ৩ জওয়ানের দেহ মেদিনীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পুলিশ-মর্গে ময়নাতদন্তের পর বিকেলে কফিন-বন্দি দেহগুলি তিন জওয়ানের বাড়ির উদ্দেশে পাঠানো হয়। তবে কোনও গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়নি। গন্তব্যে পাঠানোর আগে তিনটি কফিনে মাল্যার্পণ করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিএসপি (অপারেশন) অনীশ সরকার এবং সিআরপি-র মেদিনীপুর কার্যালয়-আধিকারিক মহেশ নলবাড়ে।
|
নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|