|
|
|
|
প্রাক্তন ক্যাপ্টেনকে শত্রু মনে না করলে সে-ও উজাড় করে দেয় |
গৌতম ভট্টাচার্য • সিডনি |
সিডনি মাঠের দক্ষিণ দিকটায় ট্রাস্টিদের বক্সে তিনি বসে আছেন। স্টিভন রজার ওয়। দেখছেন তাঁর তৈরি দলটা শত ঝড়ঝাপ্টা
সামলেও পরবর্তী প্রজন্মে কী ভাবে অক্ষত। আর পশ্চিম দিকে মিডিয়া বক্সে তিনি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। দেখছেন নিজের তৈরি এত গর্বের দলের অস্ট্রেলিয়ায় কী ভাবে এ বার সম্মান লুটোচ্ছে। মিডিয়া বক্সের সামনের খোলা গ্যালারিতে বসে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন সৌরভ।
প্রশ্ন: স্টিভ ওয়-র সঙ্গে দেখা হল?
সৌরভ: না তো।
প্র: সে কী, স্টিভ তো কাছাকাছি বক্সেই দু’দিন খেলা দেখছেন শুনলাম।
সৌরভ: ওরা ও দিকটা থাকে। আমরা এ দিকে। দেখা হয়নি (দেখা করার বিশেষ আগ্রহও গলাতে আছে বলে মনে হল না)।
প্র: আপনার অধীনে টিমটা অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় সিরিজ জিতে ফেলেছিল। অথচ বিপক্ষ তখন অনেক শক্তিশালী ছিল। হেডেন। গিলক্রিস্ট। স্টিভ নিজে!
সৌরভ: এই মাঠেই তো।
প্র: হ্যাঁ, সেই টিমটাই এ বার দুটো টেস্টের দুটোতেই হারার উপক্রম করছে। সিডনি-জনতা এত ব্যঙ্গ করছে, আওয়াজ দিচ্ছে। আপনার খারাপ লাগছে না?
সৌরভ: আমি কী করতে পারি। আমি তো কোনও ভাবেই কিছুতে জড়িয়ে নেই।
প্র: স্ট্রেট বলুন, লক্ষ্মণকে বাদ দেওয়ার সময় হয়েছে?
সৌরভ: এখনই না। পরের টেস্ট পার্থে। লক্ষ্মণকে বসালে সেখানে ঢুকবেটা কে? রোহিত শর্মা? পার্থ উইকেটে পাঁচ-ছয়-সাত হবে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা আর ধোনি! হয় না কি?
প্র: তা হলে বয়স্ক হয়ে পড়া ব্যাটিং অর্ডারে কোনও পরিবর্তন আনা হবে না? ভবিষ্যৎটা তৈরি হবে কী করে? সৌরভ: বদলাতে হবে ঠিকই। বয়স হচ্ছে এটাও ঠিক। কিন্তু দুমদাম বদলের কোনও দরকার নেই। অস্ট্রেলিয়া সিরিজটা পুরো দেখা হোক। প্র: গ্যারি কার্স্টেন না থাকাটা কি ভোগাচ্ছে? ড্রেসিংরুমে কার্স্টেন যে পরিবেশ তৈরি করে রাখতেন সেটা না থাকাটা? সৌরভ: মনে হয় না। আমরা ভাল খেলতে পারছি না। ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারছে না, এর সঙ্গে কোচের কোনও সম্পর্ক নেই। প্র: সিরিজ শুরুর আগে এত যে ছক হল অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো হবে, সেটা তো হড়কে গেল। সৌরভ: হারানো! কী যে বলেন। এখন মোটামুটি একটু খেলতে পারলেই যথেষ্ট। প্র: কী সমস্যা আছে অস্ট্রেলিয়ায় যে বারবার আমরা আটকে যাই? সৌরভ: ওদের মাঠে ওরা খুব ভাল টিম। এটা মানতেই হবে। তাই সিরিজ শুরুর আগে সবাই যখন নাচানাচি করছিল এ বার ওদের মেরে আসব, আমি বরাবর উল্টো মত প্রকাশ করেছি। মনে করে দেখুন আপনাকেও বলেছি অন্তত দুটো টেস্ট হারব। প্র: আপনার টিম ইন্ডিয়ার কর্মসূচির মধ্যে ছিল বাইরে আর দেশের ভেতরে পারফরম্যান্সের কন্ট্রাডিকশনটা কমাতে হবে। বিদেশে বড় দলের বিরুদ্ধে জিততে হবে। সেই জায়গাটা হঠাৎ হড়কে গেল কী করে? সৌরভ: কারণ ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারছে না। ১১ ইনিংস ধরে চলছে। এখানে সচিন ভাল খেলছে। ইংল্যান্ডে রাহুল খেলেছে। কিন্তু বাকিরা দাঁড়াতে পারছে না। সহবাগ সম্পর্কে সেই কবে বলেছিলাম যে, এশিয়ার বাইরে বড্ড চালিয়ে খেলছে। ওকে ধরে খেলতে হবে। ২০০৬ থেকে ২০১২ অবধি আমি বলতে পারি। অ্যাডিলেডের একটা সেঞ্চুরি বাদ দিলে কিন্তু সহবাগ বিদেশে বিশাল কিছু করেনি। প্র: বাকিরা? সৌরভ: বাকিদের রগড়াতে হবে। কেউ উইকেটে টিকে থেকে লড়াইটা করতে চাইছে না। সিমিং উইকেটে এ ভাবে খেললে হবে না। পড়ে থাকতে হবে। রগড়ে নিজের রান করতে হবে। ফুলবাবু হলে চলবে না। প্র: টি-টোয়েন্টি আর ওয়ান ডে বেশি খেলার কুফল? সৌরভ: আমি মনে করি না। বেসিক কথা হল লড়তে হবে। ক্রিজ থেকে পা বার করে বলের কাছে যাও। লড়াই করো। প্র: একটা মতবাদ হল, আপনার নেতৃত্বে যে বার টিম এসেছিল অস্ট্রেলিয়ায়, উইকেটে বল এত সিম বা সুইং করেনি। ব্যাটিং সহায়ক ছিল। এ বার ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা বেশি। সৌরভ: মানলাম না। ব্যাটসম্যান যত খারাপ খেলবে তত মনে হবে বল আরও বেশি করে সুইং করছে। প্র: ধোনির ফিল্ড প্লেসিং নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে খুব সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে সব সময় তাঁর ডিপ পয়েন্ট রেখে দেওয়াটা। সৌরভ: এক দিকে ডিপ পয়েন্ট। আর এক দিকেও লাইনে। সব সময় ব্যাটসম্যান সিঙ্গলস পেয়ে যাচ্ছে। চাপই তো তৈরি হচ্ছে না তার ওপর। প্র: হরভজন থাকলে ভাল হত মনে হচ্ছে না? সৌরভ: এই তো প্রবলেম। বাদ দেওয়ার সময় লোকের এক মিনিটও লাগে না। পরে তারা যখন বলে ভুল হয়েছে, তখন অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। বাদ দেওয়াটা খুব সহজ। যে কেউ দিতে পারে। আসল হল প্লেয়ার তৈরি করা।
ভাজ্জি থাকলে তো ভাল হতই। অশ্বিন পুরো ভুল লাইনে বল করছে। মিডল স্টাম্পে। অশ্বিনকে আমার খুব ফ্ল্যাট লাগছে। ওকে আরও বল ঘোরাতে হবে। প্র: দিন্দাকে ওয়ান ডে-তে আনা উচিত? সৌরভ: অবশ্যই। আমার মতে টেস্ট সিরিজেই আনা উচিত। প্র: পন্টিংকে কেমন দেখলেন? সৌরভ: বরাবরের ক্লাস প্লেয়ার। আমি একটুও আশ্চর্য হইনি। সব সময় পন্টিংয়ের ওপর আমার আস্থা ছিল। তবে ওর পারফরম্যান্সে আমি মাইকেল ক্লার্ককেও কৃতিত্ব দেব। বেশি কৃতিত্ব দেব। ক্লার্ক ওকে কতটা ভালবাসে, কেমন রেসপেক্ট করে দেখেছেন! স্লিপে পাশাপাশি দাঁড়ানোর সময়। একসঙ্গে ব্যাট করার সময়।
এক্স ক্যাপ্টেনকে শত্রু মনে না করে ভালবাসা দিলে সে-ও ক্যাপ্টেনের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেয়। পুরনো ক্যাপ্টেনের দক্ষতায় যখনই সে পুরোপুরি কনফিডেন্স রাখবে, তখন সে ফেরতও পাবে।
মাইকেল ক্লার্ককে আমার দারুণ লাগছে। সবাইকে নিয়ে কী চমৎকার চলছে। এক দিন দেখবেন ও অ্যালান বর্ডারের মতো বড় ক্যাপ্টেন হবে। অস্ট্রেলিয়া এই যে ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে নতুন করে তৈরি হচ্ছে তার জন্য ক্লার্ক আদর্শ ক্যাপ্টেন। |
|
|
|
|
|