কাজিরাঙায় হরিণ গণনায় দেখা যাচ্ছে, গত বারের তুলনায় বারাশিঙা (ইস্টার্ন সোয়াম্প ডিয়ার) হরিণের সংখ্যা কমেছে ২৪টি। স্থানীয় ভাষায় এই প্রজাতির হরিণকে দল বা কাদা হরিণ বলা হয়ে থাকে। ২০১০ সালের নভেম্বরে যে সুমারি হয়েছিল সে বার বারাশিঙার সংখ্যা ছিল ১১৬৮টি। আর গত কাল দিনভর গণনার পর সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ১১৪৪। ৯টি হাতিতে চেপে ৫০ জন বনকর্মী ও পশুপ্রেমী সংস্থার সদস্য গণনার কাজে অংশ নেন।
১৯৯১ সালে কাজিরাঙা অরণ্যে ৫৫৯টি বারাশিঙা ছিল। কাজিরাঙা বস্তুত বিপন্নতার তালিকায় একেবারে উপরের সারিতে থাকা ‘ইস্টার্ন সোয়াম্প ডিয়ার’ বা পূর্বী বারাশিঙার শেষ আবাসস্থল হিসাবে কথিত। ২০০৭ সালের সুমারিতে কাজিরাঙায় মিলেছিল মাত্র ৬৮১ টি বারাশিঙা হরিণ। পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলি এই পরিসংখ্যান পেয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। অতঃপর ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে যে সুমারি হয়, সে সময় বারাশিঙার সংখ্যা বেড়ে বেড়ে হয় ১১৬৮টি। ওই বছরই ৩ নভেম্বর, দিল্লিতে কাজিরাঙার বারাশিঙা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বন দফতর ও ডব্লিউটিআইয়ের তিন বছরে মোট ৮৫ লক্ষ টাকার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। গত কালের গণনায় বারাশিঙার সংখ্যা আবার কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় চিন্তিত পরিবেশ আন্দোলকারী ও বন্যপ্রাণীপ্রেমী সংগঠনগুলি। বনকর্তাদের ধারণা, অসুখবিসুখ ও বাঘ-সহ শ্বাপদদের আক্রমণেই কমেছে বারাশিঙার সংখ্যা।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বিপন্ন এই প্রজাতির হরিণকে সংরক্ষণে জোরদার ব্যবস্থা নিতে হবে। |
তাঁদের আশঙ্কা, মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়লে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে কাজিরাঙার অন্যতম সম্পদ এই বারাশিঙা। এই প্রজাতির হরিণ প্রজননেও তেমন উৎসাহী নয়। অবসাদের এই প্রবণতাও এই হরিণ প্রজাতিকে বিপন্নতর করে তুলছে। স্থানীয় ভাষায় দল (কাদা) হরিণ নামে পরিচিত এই প্রজাতিটি ‘সোয়াম্প ডিয়ার’-এর তিনটি প্রজাতির অন্যতম। ভারত ও নেপালে মেলা অন্য দু’টি প্রজাতি হল--গাঙ্গেয় উপত্যকার ‘ওয়েটল্যান্ড সোয়াম্প ডিয়ার’ ও মধ্য ভারতের ‘হার্ডগ্রাউন্ড সোয়াম্প ডিয়ার’। কী কারণে দ্রুত বিশ্ব থেকে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে এই হরিণ, তা নিয়েও গবেষণা চালাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি, উপযুক্ত পরিবেশ মিললে অন্য কোনও অভয়ারণ্যে এই হরিণের প্রতিস্থাপন সম্ভব কিনা তা-ও বিবেচনা করে দেখছে ডব্লিউটিআই ও অসম বন দফতর। সকলেই চান, পৃথিবীর বুক থেকে যেন কোনও ভাবেই না হারিয়ে যায় এই প্রজাতির হরিণ। |