‘সুদিনে’ ফিরতে চায় বেগমপুর
দিনরাত খটাস-খটাস মাকুর শব্দে শব্দে মুখর হয়ে থাকে পাড়াগুলো। মাঝ-পৌষের দু’তিনটে দিন অবশ্য তাঁত কার্যত চলেই না এখানে। কেননা, এই ক’টা দিন অকাল বিশ্বকর্মা পুজোয় মাতে হুগলির বেগমপুরের তন্তুবায় পরিবারগুলি। মাকুর আওয়াজের সঙ্গে ঘোড়ার চলার শব্দের মিল রয়েছে। সে কারণে বিশ্বকর্মার বাহন এখানে হাতি নয়, ঘোড়া। বর্তমানে অন্তত ৩০টি বারোয়ারি পুজো হয় এখানে। দু’দিনের এই পুজো শেষ হল মঙ্গলবার। পুজো উপলক্ষে আলোর বন্যায় ভেসেছে এলাকা। তাঁতশিল্পের জনপ্রিয় এই এলাকা অবশ্য তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। তাঁতিরা চাইছেন, বিশ্বকর্মার হাত ধরে যেন তাঁতের সুদিন ফিরে আসে। শিল্প বাঁচাতে রাজ্য সরকারেরও হস্তক্ষেপ দাবি করছেন তাঁরা।
বেগমপুরের তাঁতের নামডাক সুবিদিত। মূলত বেগমপুর পঞ্চায়েতের তিনটি গ্রাম খড়সরাই, বেগমপুর এবং ছোট তাজপুরে গ্রামে তাঁতের কাপড় তৈরি হয়। গ্রামবাসীরা জানান, দুর্গাপুজোর নবমীর তিন মাসের মাথায় এখানকার ঘরে ঘরে তাঁতের উপর শোলার তৈরি ঘোড়া রেখে বিশ্বকর্মা হিসেবে পুজো করার চল আছে। এই প্রথা একশো বছরেরও প্রাচীন। তখন মূর্তিপুজোর প্রচলন ছিল না। মূর্তিপুজো আরম্ভ হয় প্রায় পাঁচ দশক আগে। ছোট তাজপুর কাঁঠালতলায় প্রথম বারোয়ারি বিশ্বকর্মা পুজো শুরু হয়।
নিজস্ব চিত্র।
তার পর থেকে যত সময় গড়িয়েছে, ততই জাঁকজমক বেড়েছে পুজোর। কাঁঠালতলার পাশাপাশি খড়সড়াই দক্ষিণপাড়া যুবশক্তি সঙ্ঘ, হাটতলা, মধ্যমপাড়া, শীলপাড়া, ষষ্ঠীতলা, বেগমপুর চালতাতলা-র মতো বেশ কিছু পুজো দেখতে দলে দলে মানুষ ভিড় করেছেন এই দু’টো দিন। সব জায়গাতেই দেখা গেল সুদৃশ্য মণ্ডপে ঘোড়ার উপরে বিরাজমান বিশ্বকর্মা। বাড়তি পাওনা চন্দননগরের আলোকসজ্জা।
এক সময় এ তল্লাটে রমরম করে তাঁতের কারবার চলত। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরেই সেই সুদিন হারিয়েছে বেগমপুরের তাঁত। শিল্পীরা জানালেন, এখানকার তাঁত এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। যন্ত্রচালিত তাঁতের সঙ্গে লড়াইতে এঁটে উঠতে পারেনি এখানকার তাঁর। তার উপর, পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা সুতোর দাম, বাজারে দাম না পাওয়া, সরকারি নিয়ন্ত্রণহীনতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এখানকার হস্তচালিত তাঁতশিল্প। একটা সময় ছিল, যখন বেগমপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘরে ঘরে তাঁত ছিল। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আর সে ভাবে আসছেন না এই কাজে। তাঁতের বিকল্প এসেছে। অন্য পেশায় ভিড়ছে নতুন প্রজন্ম। এই পরিস্থিতিতেও অবশ্য বছরের এই সময়ে বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজনে ঘাটতি রাখতে চায় না তন্তুবায় পরিবারগুলো। খড়সরাইয়ের যুবক নবীন সেন বলেন, “এই শিল্পকে ভালবেসে তাঁতের কাপড় তৈরিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। বিশ্বকর্মাকে তুষ্ট করতে পারলে এই শিল্পে সুদিন ফিরবে, এই আশা করি।” নবীনদের বাড়িতে ন’টা তাঁত চলে। তাঁর কথায়, “তাঁতশিল্পে মন্দা। তাই, বছরের অন্য সময় এখানকার তাঁতিদের মুখে হাসি থাকে না। এই দু’টো দিন অবশ্য ব্যতিক্রম। এই সময় আমরা সব দুঃখ ভুলে যেতে চাই। তাঁতে আবার সুদিন ফিরলে আরও আনন্দ করতে পারব। এ জন্য সরকার সরাসরি আমাদের থেকে বস্ত্র কিনুক।” চাষিদের বক্তব্য, সমবায়গুলোর অবস্থা শোচনীয়। তাঁতি পরিবারগুলো তাই এখন মহাজনের মুখাপেক্ষী। বেগমপুরের চাষি সূর্য দত্তের বক্তব্য, “সরকারের সঙ্গে আমাদের আদানপ্রদান হয় সমিতির মাধ্যমে। কিন্তু, এই ব্যবস্থায় তাঁতি কিছুই পায় না। এই কাজ করে বাড়িতে হাঁড়ি চড়ানো দায় হয়ে উঠছে। সরকার সরাসরি প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাঁতিদের থেকে বস্ত্র কিনুক। তা হলেই চিরন্তন এই হস্তচালিত শিল্প আর তাঁতিরা বাঁচবে, নচেৎ নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.