সম্পাদকীয় ২...
দুর্ভাগ্যজনক
সিঙ্গুরের ভূত এখনও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে তাড়া করিয়া ফিরিতেছে। প্রমাণ গুজরাতের সানন্দ’য় ন্যানোর কারখানা দেখিতে যাওয়ার জন্য রাজ্য বিধানসভার শিল্প-বাণিজ্য দফতরের স্থায়ী কমিটির নির্ধারিত সফরসূচি শেষ মুহূর্তে বাতিল হওয়া। সফরটি কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। রাজ্যের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করিতেই বিধানসভার ওই কমিটি আলাপ-আলোচনা করিয়া কর্মসূচিটি স্থির করেন। শাসক দলের বিধায়করাও কমিটিতে আছেন। কিন্তু অনুমান করিবার কারণ আছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি শেষ মুহূর্তে বাধা হইয়া দাঁড়ায়। শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী বলিয়াছেন, তিনি (তাঁহারই মন্ত্রকের) এই কমিটির কর্মসূচি সম্পর্কে কিছু জানিতেন না। সত্যই না জানিলে সেই অজ্ঞতা বুক বাজাইয়া বলার নয়। আর যদি দলনেত্রীর রোষ হইতে নিজেকে রক্ষা করিতে মন্ত্রিবর এমন যুক্তি দিয়া থাকেন, তবে মন্তব্য সত্যই নিষ্প্রয়োজন।
ন্যানো গাড়ি লইয়া তৃণমূল কংগ্রেসের অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা সিঙ্গুরে জমি-অধিগ্রহণ-বিরোধী আন্দোলনের সূত্রেই। সেই সূত্রেই রাজ্যে শিল্পায়নের বিরোধী হওয়ার অভিযোগও তৃণমূল নেত্রীর ভাবমূর্তির অঙ্গীভূত হইয়া যায়। শাসনক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর হইতেই মুখ্যমন্ত্রী এই ভাবমূর্তি পরিবর্তনে সক্রিয় ও সচেষ্ট হইয়াছেন। গুজরাতে ন্যানোর কারখানা দেখিতে যাওয়া বাতিল করার নাটকীয় ক্রিয়াকলাপ কি সেই প্রচেষ্টার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ? বিশেষত ন্যানোর সাফল্যে উজ্জীবিত হইয়া যখন দেশের তিন-তিনটি মোটর নির্মাণ সংস্থা প্রায় পনেরো হাজার কোটি টাকা সানন্দে লগ্নি করিতে তৎপর হইয়াছে? এই বিনিয়োগের ফলে সানন্দ ভবিষ্যতে চেন্নাই, গুড়গাঁও বা পুণের মতো ‘অটোমোবাইল হাব’-এ পরিণত হইতে চলিয়াছে। সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করিয়া পশ্চিমবঙ্গেও এমন ‘হাব’ গড়িয়া উঠিতে পারিত। আশু তেমন কোনও সম্ভাবনা নাই। কিন্তু মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র রূপে গুজরাতের বিকশিত হওয়ার প্রক্রিয়া সরেজমিনে দেখিলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হইত?
প্রধান সত্যটি বুঝিতে অসুবিধা নাই। এই সফরের পরিকল্পনা করিতেই হইবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। কিন্তু সফরের পরিকল্পনা করিয়া তাহা বন্ধ করিয়া দেওয়া, এবং বিচিত্র ভাবে বন্ধ করিয়া দেওয়া একটি অত্যন্ত অবাঞ্ছিত সংকেত পাঠায়। ন্যানো কিংবা টাটা অথবা নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে এই ছুৎমার্গ পশ্চিমবঙ্গকে আর যাহাই হউক শিল্পবান্ধব রাজ্য হিসাবে তুলিয়া ধরে না। বরং শেষ মুহূর্তের সফর-বাতিল নাটক সম্ভাব্য লগ্নিকারীদের রাজ্য সম্পর্কে এই বার্তা দেয় যে, পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি, বিশেষত দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ, অগ্রাধিকার বা স্পর্শকাতরতাই নির্ণায়ক। বিনিয়োগকারীদের তাহা শিরোধার্য করিয়াই লগ্নি করিতে আসিতে হইবে। শিল্পায়ন এ রাজ্যে শাসক দলের পছন্দসাপেক্ষ, গুজরাতের মতো তাহাতে সর্বদলীয় সম্মতির আগাম সিলমোহর নাই। যেন শিল্পায়ন গোটা রাজ্যকে সমৃদ্ধ করিবে না, নূতন কর্মসংস্থানের বন্ধ দরজা অর্গলমুক্ত করিবে না কিংবা রাজ্যবাসীর সার্বিক উন্নতির সোপান হইয়া উঠিবে না। শিল্পায়ন-প্রক্রিয়াকে রাজনীতি হইতে বিযুক্ত করার মানসিকতা আয়ত্ত করিতে না পারিলে রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নের কোনও সম্ভাবনা নাই। বিধানসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এবং মন্ত্রীরা যত শীঘ্র তাহা উপলব্ধি করেন, ততই মঙ্গল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.