প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি বনাম সেনাপ্রধান জেনারেল বিজয়কুমার সিংহ। বয়স নিয়ে বিতর্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে কার্যত সম্মুখ সমরে নেমে পড়েছেন সেনাপ্রধান। কিন্তু তাঁর চাপের কাছে মাথা নোয়াতে রাজি নয় সরকার। সেনাপ্রধান আদালতে গেলে সেখানেও তাঁর মোকাবিলা করতে রাজি সরকার। কিন্তু অবসরের আগেই যদি তিনি মামলা করেন, সেনাপ্রধানকে অপসারণের কথাও ভেবে রেখেছে সরকার। গোটা বিষয়টি নিয়ে আজ অ্যান্টনির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
|
বিজয়কুমার সিংহ |
বছর দেড়েক আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিয়ে বাহিনীতে শুদ্ধকরণের ডাক দেন জেনারেল সিংহ। এখন তাঁর অবসর নিয়েই অনিয়ম ও ক্ষমতার লড়াই সামনে এসেছে। বিতর্কের সূত্রপাত সেনাপ্রধানের জন্ম সাল নিয়ে। দুই বিভাগে দুই রকম জন্মতারিখ নথিবদ্ধ করা আছে সেনাপ্রধানের। যেখানে সেনাবাহিনীর সমস্ত অফিসারদের সম্পর্কে রেকর্ড থাকে, সেখানে তাঁর জন্মতারিখ রয়েছে ১৯৫১ সালের ১০ মে। আবার যে বিভাগ সেনা অফিসারদের পদোন্নতি ও নিয়োগ দেখে, সেখানে তাঁর জন্মতারিখ ১৯৫০ সালের ১০ মে।
জেনারেল সিংহের দাবি, তাঁর জন্ম আসলে ১৯৫১-এ। কিন্তু তা মানতে রাজি নয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেনাপ্রধানের ৩১ মে অবসর নেওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামের বাসিন্দা, ইস্টার্ন কম্যান্ডের প্রধান লেফটেনান্ট জেনারেল বিক্রম সিংহ পরবর্তী সেনাপ্রধান হবেন। কিন্তু ১৯৫১-কে তাঁর জন্মসাল হিসেবে মেনে নিলে তিনি অবসর নেবেন ২০১৩ সালের মার্চে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সেনাপ্রধান হবেন বর্তমানে নর্দান কম্যান্ডের প্রধান লেফটেনান্ট জেনারেল কে টি পট্টনায়েক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মনে করছে, উত্তরসূরির এই পর্যায়ক্রম বদলে গেলে সেনাবাহিনীর একটা অংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হবে।
সেনাবাহিনীর রেকর্ডে অসঙ্গতি তৈরি হল কী ভাবে? প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বক্তব্য, ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে ভর্তির সময় ফর্মে বিজয়কুমার সিংহই জানিয়েছিলেন, তাঁর জন্ম ১৯৫০ সালে। আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেন, “এই বিতর্ক খুবই দুঃখজনক। জেনারেল সিংহ দুর্দান্ত অফিসার। কিন্তু নিয়মকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।” সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠ মহলের যুক্তি, জেনারেল সিংহ বহু বার তাঁর জন্মসাল সংশোধন করার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর দুই পূর্বসূরি তা গ্রাহ্য করেননি। ২০১০ সালের এপ্রিলে সেনাপ্রধান হন বিজয়কুমার সিংহ। তার পরে তিনি তাঁর জন্মসাল ঠিক করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে আবেদন জানান। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে তিন বার আইন মন্ত্রক ও অ্যাটর্নি জেনারেলের মত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, ১৯৫০ সালকেই সেনাপ্রধানের জন্মসাল হিসেবে ধরা হবে। পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছেও আর্জি জানান সেনাপ্রধান। তা-ও খারিজ হয়ে যায়।এ নিয়ে বিতর্ক প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় এখন প্রধানমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বিষয়টির সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। সম্প্রতি সেনাপ্রধান দু’বার প্রণবের সঙ্গে দেখাও করেছেন। জেনারেল সিংহ নিজে স্পষ্ট করে জানাননি তিনি কী করতে চলেছেন। এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারদের একটি সংগঠন সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে জনস্বার্থ মামলা করছে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, সেনাপ্রধানকে ৩১ মে-ই অবসর নিতে হবে। তার আগে তিনি আদালতে গেলে তাঁকে অপসারিতও করা হতে পারে। |