দুর্নীতির দায়ে মায়াবতীর দল থেকে বিতাড়িত নেতাদের বিজেপিতে নেওয়ার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি রয়েছে লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজদের। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ফায়দা তুলতে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে ঝুঁকি নিতে চাইছেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। আপাতত তাঁর সিদ্ধান্ত, একদা মায়া-ঘনিষ্ঠ বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে দলে রাখলেও তাঁকে ভোটে টিকিট দেওয়া হবে না। দলের ‘মুখ’ হিসেবে তুলে ধরে প্রচারও করানো
|
বাবুসিংহ |
হবে না। বাবুসিংহকে দলে নেওয়ার বিরুদ্ধে মুখ খোলায় রাজ্য ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য আই পি সিংহকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, এ ভাবে দলের ক্ষুব্ধ নেতাদের নিজের মনোভাব বুঝিয়ে দিলেন গডকড়ী।
আজ সকাল থেকেই বাবুসিংহ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বাড়ি, দফতরে সিবিআই হানা দেয়। আর নানা সমস্যায় জর্জরিত কংগ্রেসও বিজেপিকে আক্রমণের নতুন অস্ত্র পেয়ে আসরে নেমে পড়ে। বাবুসিংহ বিতর্কে বিজেপির বিভাজনকে উস্কে দিয়ে কংগ্রেস আজ আক্রমণের লক্ষ্য হিসাবে বেছে নেয় লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রশিদ আলভি বলেন, “বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী আডবাণী সম্ভবত দুর্নীতিগ্রস্তদের খুঁজে দলে নেওয়ার জন্যই রথযাত্রায় বেরিয়েছিলেন। তাঁকে অভিনন্দন।”
লোকপাল বিল নিয়ে রাজ্যসভায় সরকারকে কোণঠাসা করার পর আগামিকালই রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার কথা আডবাণীদের। তার আগে কংগ্রেস আজ বিজেপির বিরোধিতার ধার কমানোর কৌশলও নিয়েছে। আলভির মতে, “এখন স্পষ্ট যে কেন বিজেপি লোকপাল বিলের বিরোধিতা করেছে।” কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, “এর পরেও বিজেপি-র বিরুদ্ধে চুপ থাকবেন অণ্ণা হজারে?” এনডিএ-র শরিক জেডি (ইউ) নেতা শরদ যাদবও বিজেপির ভূমিকার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিকেই প্রার্থী করা উচিত। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির সঙ্গে জোট না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেই লড়ব আমরা।” আডবাণী-জেটলি-সুষমারা এই আশঙ্কাই করেছিলেন। কিন্তু অনড় গডকড়ী মনে করেন, জাতীয় স্তরে দুর্নীতি-বিরোধী প্রচারে আঁচ পড়লেও আখেরে উত্তরপ্রদেশে লাভই হবে। এক, এঁরা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির নেতা। যাঁদের দিয়ে এই ভোটব্যাঙ্ক সংগঠিত করা যাবে। দুই, যে দুর্নীতির অভিযোগ এঁদের বিরুদ্ধে উঠেছে, সেটি জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন সংক্রান্ত। সেখানে কেন্দ্রেরও ভূমিকা রয়েছে। ফলে দুর্নীতি প্রশ্নে কংগ্রেস এবং মায়াবতীর যোগসাজশের অভিযোগ আনা যাবে। সেই কৌশলের অঙ্গ হিসাবে আজ মুখতার আব্বাস নকভিকে তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক করতে পাঠান গডকড়ী। নকভি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দীর্ঘ অভিযোগ আনেন। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তাঁকে বলতে হয়, “কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে বিজেপি আড়াল করবে না।” পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, “উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর দুর্নীতিতে কংগ্রেসের যোগসাজশ রয়েছে। সিবিআইও কংগ্রেসের ইশারায় মায়াবতীর সুরে সুর মেলাচ্ছে। গতকাল এই নেতারা বিজেপিতে আসার পরে আজ সিবিআই হানা হল কেন?” রাহুল গাঁধী এবং দিগ্বিজয় সিংহ মায়াবতীর বিরুদ্ধে যোগসাজশ করেছেন এবং তার ফলে বিভিন্ন মামলা থেকে মায়াবতীকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলেও তাঁর অভিযোগ। সিবিআইয়ের তরফে এই অভিযোগ খণ্ডন করা হয়েছে। সিবিআই আজ দাবি করেছে, দেড় মাস তদন্তের পর গত পরশু অর্থাৎ ওই নেতারা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগেই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তল্লাশি করে যে সব তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণ স্পষ্ট। |