সন্ধ্যা সওয়া ৬টা। বুধবারের ব্যস্ত সময়ে অফিস-ফেরত যাত্রীদের ভিড়ে ঠাসা পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশন। তার কিছুক্ষণ আগেই রবীন্দ্র সদন স্টেশনে আপ লাইনে এক বৃদ্ধ ‘ঝাঁপ’ দেওয়ায় সাময়িক ভাবে বন্ধ রয়েছে মেট্রো চলাচল।
এমন সময়ে আচমকাই কয়েক জন যাত্রী দেখলেন, স্টেশনের আপ প্ল্যাটফর্মে ছাদের ভেন্টিলেশন দিয়ে গলগল করে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আতঙ্কে ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার শুরু করেন তাঁরা। দৌড়োদৌড়ি শুরু হয়ে যায়। প্ল্যাটফর্মের দু’দিকের সিঁড়ি দিয়েই যাত্রীরা স্টেশন ছেড়ে বেরোতে শুরু করেন। খবর পেয়ে রেল-সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানেরাও প্ল্যাটফর্মে নেমে যাত্রীদের বাইরে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেন। দু-তিন মিনিটের মধ্যেই প্ল্যাটফর্ম খালি হয়ে যায়। ততক্ষণে চলে আসেন মেট্রোর অগ্নি-নির্বাপণ কর্মীরা। পৌঁছে যায় দমকলের দু’টি ইঞ্জিনও।
এর পরেই আগুনের উৎস খুঁজে বার করার চেষ্টা শুরু হয় এবং তখনই কয়েক জন দেখেন, মেট্রোর টানেলের উপরে, বাইরে যেখানে ভেন্টিলেশন মেশিনটি বসানো রয়েছে, তার পাশেই কেউ বেশ কিছু কাঠ জ্বালিয়েছে। আর ভেন্টিলেশনের ওই যন্ত্রটি হাওয়ার সঙ্গে কাঠের কালো ধোঁয়া টেনে নিয়ে প্ল্যাটফর্মের ভিতরে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ওই কাঠ নিভিয়ে ফেলা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ধোঁয়াও কমে যায়। মেট্রো-কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই ঘটনায় ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটেনি।
ওই ঘটনার আগেই বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টা নাগাদ রবীন্দ্র সদন স্টেশনে এক বৃদ্ধ আপ লাইনে ‘ঝাঁপ’ দিয়েছিলেন। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো পর্যন্ত প্রায় ৩০ মিনিট বন্ধ ছিল মেট্রো চলাচল। ওই সময়ের মধ্যেই পার্ক স্ট্রিটের ঘটনাটি ঘটে। ফলে ট্রেন আগে থেকেই বন্ধ ছিল। তবে আগুনের আতঙ্ক ছড়ানোর পরে প্ল্যাটফর্ম থেকে সব যাত্রীদেরই বার করে দেওয়া হয়। ডিসপ্লে বোর্ড বন্ধ ছিল। ওই সময়ে কোনও যাত্রীকে প্ল্যাটফর্মে নামতেও দেওয়া হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, মেট্রোর লাইনে ‘ঝাঁপ’ দেওয়া ওই বৃদ্ধের নাম বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়ি কোচবিহারে। তাঁর ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে। এ দিন রবীন্দ্র সদন স্টেশনের আপ লাইনে ট্রেন আসার সময়ে হঠাৎই লাইনে ঝাঁপ দেন তিনি। চালক আগে থেকে বুঝে গিয়ে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষে ট্রেন থামিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও ওই বৃদ্ধের শরীরের কিছু জায়গায় আঘাত লেগেছে বলে মেট্রো রেল সূত্রের খবর। এর পরে তৃতীয় লাইনে বিদ্যুৎ বন্ধ করে ওই বৃদ্ধকে লাইন থেকে তুলে এনে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। |