ধর্ষণ প্রমাণিত হলে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে দোষী ব্যক্তির। অথচ ধর্ষিতা নারীর সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারার কোনও দিশা নেই আইনে। ২০০৪ সালের একটি ধর্ষণ মামলায় আইনের পরিধির মধ্যে থেকেই তেমন এক দিশা খোঁজার চেষ্টা করছে কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
এই মামলাটিতে ধর্ষিতা মহিলার সামাজিক পুনর্বাসনের কথা মাথায় রেখে বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত এবং বিচারপতি তরুণ গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ ধর্ষণকারীর কারাদণ্ডের বকেয়া চার বছর মকুব করে দিতে রাজি হয়েছেন। তবে তা নিঃশর্ত নয়। দণ্ডিত ব্যক্তিই ধর্ষিতাকে পাঁচ লক্ষ টাকা দেবেন। ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, পাঁচ লক্ষ টাকা পেলে ওই মহিলা মাসে ছ’হাজার টাকা সুদ পাবেন। হাইকোর্টের মাধ্যমেই ওই টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দেওয়া হবে। মহিলা এককালীন টাকা তুলে নিতে পারবেন না। ডিভিশন বেঞ্চ মনে করে, এই ব্যবস্থা ওই মহিলাকে সুস্থ ভাবে বাঁচতে সাহায্য করবে।
ধর্ষণের ওই মামলায় অভিযুক্ত রাজু দাসকে নিম্ন আদালত দোষী সাব্যস্ত করে দশ বছর কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল। রাজু নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করেন। আপিল মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য গৃহীত হলে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ইতিমধ্যে তাঁর ছ’বছর কারাবাস হয়ে গিয়েছে।
কয়েক দিন আগেই ওই আপিল মামলার শুনানি শুরু হয়। সওয়াল চলার সময়ে ধর্ষিতার খোঁজ নেয় ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্য সরকারের আইনজীবী সাবির আহমেদ জানান, মঙ্গলবার ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে ওই মহিলা হাইকোর্টে আসেন। বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলেন। দোষী ব্যক্তির বকেয়া শাস্তি রদ করার ভাবনা এবং পাঁচ লক্ষ দেওয়ার টাকার কথা বিচারপতি ওই মহিলাকে জানান। তবে তিনি বিচারপতিকে কী বলেছেন, তা জানা যায়নি।
রাজুর আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চের কাছে টাকার অঙ্ক কমিয়ে দেড় লক্ষ করার আর্জি জানালে তা খারিজ হয়ে যায়। ডিভিশন বেঞ্চ বলে, আদালত চায় ওই মহিলা সুস্থ ভাবে বাঁচুন। তাঁর একটি সন্তান রয়েছে। মাসে ছ’হাজার টাকা পেলে দু’জনে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি রাজুর আইনজীবী তাঁদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। দোষী ব্যক্তি পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হলে এবং ওই মহিলা সেই টাকা নিতে সম্মত হলে ধর্ষিতার যন্ত্রণামুক্তির পথে আপাতত একটা দিশা মিলবে বলে মনে করছে ডিভিশন বেঞ্চ। |