কলকাতা জেলা সম্মেলন
যেমন খুশি বলা নয়,
‘মিডিয়া-নীতি’র দাবি সিপিএমে
যুগ পরিবর্তনের হাওয়া এ বার ঢুকে পড়ছে সিপিএমের অন্দরেও!
‘বুর্জোয়া সংবাদমাধ্যমে’র বিরুদ্ধে কেবল তোপ দাগার বদলে সুনির্দিষ্ট ‘মিডিয়া-নীতি’ তৈরি দাবি উঠেছে দলে। দাবি উঠেছে, টিভি চ্যানেলের যুগে দলের নেতারা কী বলবেন, কী ভাবে বলবেন সব কিছুই ছকে নেওয়া হোক। দলের মধ্যেই বক্তব্য, টিভি ক্যামেরার সামনে এই ২০১২ সালে নেতারা যে যেমন খুশি মন্তব্য করে চলবেন, সে যুগ শেষ!
খাস কলকাতায় সিপিএমের জেলা সম্মেলনে মিডিয়া-নীতি চেয়ে এই ভাবেই সরব হচ্ছেন প্রতিনিধিরা। রাজধানী শহরে রাজনীতি করার সুবাদে যে জেলার কর্মীরা জনমানসে সংবাদমাধ্যমের ‘প্রভাব’ সম্পর্কে সম্যক অবহিত।
রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের উপস্থিতিতে জেলা সম্মেলনের প্রতিনিধিরা বেফাঁস মন্তব্যের জন্য বিশেষ কারও নাম করেননি। কিন্তু অসতর্ক মন্তব্য করে নেতারাই যে দলের বিপর্যয় ডেকে আনতে সাহায্য করেছেন, এই মত জানাতে রেয়াত করেননি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তাঁদের অনেকেরই অভিযোগের তির প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের দিকে। শুধু তৃণমূল বা তাদের নেতা-নেত্রীদের আক্রমণই নয়, বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে নিজের দল সম্পর্কেও এমন দাবি গৌতমবাবু করেছেন, যা আখেরে তাঁদের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলেই প্রতিনিধিদের অভিমত। যেমন তাঁরা উদাহরণ দিয়েছেন গৌতমবাবুর একটি মন্তব্যের “এমন সরকার বানাব, ১৫ বছর লোকে কিছু বলতে পারবে না!” প্রতিনিধিদের একাংশের প্রশ্ন, তা হলে কি ৩৪ বছরের সরকার এমনি এমনি ছিল?
এই সূত্রেই উঠেছে ‘মিডিয়া-নীতি’র দাবি। যে সূত্র ধরেই কলকাতা মধ্য-পূর্ব জোনের প্রতিনিধি বাবুন ঘোষ দস্তিদার বুধবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রস্তাব দিয়েছেন, সিপিএম নিজস্ব ‘মিডিয়া হাউস’ তৈরি করার কথা ভাবুক। বাজার-চলতি নির্দিষ্ট একটি চ্যানেলের ভরসায় না-থেকে সম্পূর্ণ নিজেদের চ্যানেল হোক। কেরল সিপিএম যে কাজ ইতিমধ্যেই করে দেখিয়েছে। দরকারে এখানে তার জন্য দলের কমরেডরাই চাঁদা তুলে দেবেন। বাবুনবাবু ওই প্রস্তাব দেওয়া মাত্রই প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের সম্মেলন কক্ষে হাততালির ঝড় উঠেছে! এই প্রস্তাব যে সিপিএমের ভিতরের ‘জনপ্রিয়’ দাবি, প্রতিনিধিদের প্রতিক্রিয়াতেই তা স্পষ্ট বলে দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা।
সাম্প্রতিক কালে নানা ঘটনায় বিমানবাবু, গৌতমবাবু, অনিল বসুদের মন্তব্য এবং কথাবার্তার ভঙ্গি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে দ্রুত ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়ে দলের ক্ষতি করেছে বলে সরব হচ্ছেন কলকাতার কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নেতা ‘দুঃখপ্রকাশ’ করেছেন। কিন্তু তত ক্ষণে ‘রিপিট টেলিকাস্ট’ হয়ে যা ক্ষতি হওয়ার, হয়ে গিয়েছে! তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মেঠো ভাষায় দল এবং নেতাদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করে আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা আলিমুদ্দিনের চক্ষুশূল হলেও প্রতিনিধিরা কিন্তু ‘ভাষা সংযমে’র কথা বলার সময় তাঁর কথা বিশেষ বলছেন না!
পক্ষান্তরে, তাঁরা বলছেন, ‘বিরোধী দলনেতাকে দেখে শিখুন’! জেলে বন্দি সুশান্ত ঘোষের সঙ্গে দেখা করে পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা কেন ‘সহমর্মিতা’ জানাচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন ওঠার সময় সূর্যকান্ত মিশ্রও ওই তালিকায় পড়েছেন। কিন্তু জনসমক্ষে কথা বলার সময়, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আদানপ্রদানের সময় সূর্যবাবুর ভূমিকা ‘ভূয়সী প্রশংসা’ পাচ্ছে কলকাতার সম্মেলনে।
শুধু ভাষা ব্যবহারই নয়, সার্বিক ভাবে ‘বাগাড়ম্বরে’র জন্যই নেতাদের বিরুদ্ধে প্রবল ভাবে সরব শহরের সিপিএম কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, দলের দলিলে অনেক ‘সুন্দর সুন্দর কথা’ লেখা হয়। কিন্তু নেতারা কি উপর থেকে নেমে নিচু তলায় যান? ‘বাস্তব’ এবং নেতাদের বিবৃতির মধ্যে ফারাক দেখিয়ে কাশীপুর-বেলগাছিয়া জোনের প্রতিনিধি কল্যাণ সমাদ্দার যেমন বলেছেন, যেখানে এত দিন নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’ হয়নি, সেখানেই মানুষের প্রতিবাদ বেশি হয়েছে। সেই সব এলাকায় পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে গিয়েছে। দলের মধ্যে ‘অনৈক্যের বীজ’ উপর থেকেই বপন করা হয়েছে। অথচ, নেতারা কিন্তু নিচু তলার উপরে দায় চাপিয়ে বিবৃতি দিয়েই খালাস!
কলকাতার নানা প্রান্ত থেকে আসা প্রতিনিধিদের বড় অংশের অভিমত, শুধু দলিল তৈরি করে পরিস্থিতি ফেরানো যাবে না। সর্বভারতীয় নেতৃত্ব হিসাবে পলিটব্যুরো, কেন্দ্রীয় কমিটি দলিলই তৈরি করে যায় আর দল প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছর পরেও কোনও রাজ্যে ০.৫% ভোটে আটকে থাকতে হয় সিপিএমকে! তাই তাঁদের দাবি, দলের ভাবনাচিন্তার ধরন (মাইন্ডসেট) বদলাক। পরিবর্তিত চিন্তাতেই তৈরি হোক ‘মিডিয়া-নীতি’। এই পরিবর্তনের আহ্বানে সিপিএম নেতৃত্ব সাড়া দেবেন কি না, কর্মী-মহলে প্রশ্ন সেটাই!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.