রাজ্যে ‘পরিবর্তনে’র সরকার এসেছে বলে ফুটপাথে ‘ইচ্ছেমতো’ বসার অধিকার চায় ‘হকার সংগ্রাম কমিটি’। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে হকারেরা বুধবার ফের বসতে গিয়েছিলেন এসএসকেএম চত্বরে। পুলিশ তাঁদের বসতে দেয়নি। বরং নতুন এলাকায় ফুটপাথ দখল করে হকার বসতে না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার নিয়েছিলেন, তাতেই অটল থেকেছে। বুঝিয়ে দিয়েছে এই ধরনের ‘যথেচ্ছাচারের’ সঙ্গে কোনও রকম আপস করা হবে না। আর তাতেই রোষ বেড়েছে হকার নেতাদের।
হকার নেতারা জানান, শহরের কোনও অঞ্চল থেকে এক জন হকারকে তোলা হলেও তাঁরা আন্দোলনে নামবেন। দরকারে আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করবেন তাঁরা। ‘হকার সংগ্রাম কমিটির’ তরফে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সংগঠনের নেতা শক্তিমান ঘোষ দাবি তোলেন, “সুপ্রিম কোর্ট হকার উচ্ছেদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। আগেকার পুর-পর্ষদ এবং বাম সরকার হকারদের অধিকার স্বীকার করে নিয়েছে। তা এই সরকারকেও মানতে হবে। ফুটপাথে হকার বসবে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ দিনও বলেন, “আমরা হকারদের পক্ষে। তবে কোন হকার ইউনিয়ন কী বলল, চড়া সুরে বলল না হুমকি দিল, তাতে কিছু যায়-আসে না।”
হকার উচ্ছেদের পক্ষে তাঁরা নন, এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নীতি। কারণ এর সঙ্গে বহু মানুষের রুজি-রুটির প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। তবে নতুন জায়গায় হকার বসতে দেওয়া হবে না। পুরনো জায়গায় বসতে দেওয়া হলেও সেখানে বসতে হবে শৃঙ্খলা মেনে। যেমন, ইতিমধ্যেই মঙ্গলাহাট এলাকা ছাড়িয়ে বঙ্কিম সেতুর উপরে এসে বসা হকারদের তুলে দিয়েছে পুলিশ। তুলে দেওয়া হয়েছে শিয়ালদহ আদালত-সংলগ্ন অঞ্চল থেকেও।
হকারদের যত্রতত্র বসা রোখার পদক্ষেপে এসএসকেএম হাসপাতাল এবং গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলের সামনে থেকে মঙ্গলবার হকারদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন মমতা। সেই নির্দেশই কার্যকর করে বুধবার ওই চত্বরে হকারদের বসতে দেয়নি পুলিশ। তার প্রতিবাদেই এ দিন হকার ইউনিয়নের সদস্যেরা হরিশ মুখার্জি রোডে বিক্ষোভ দেখান। পরে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে হকার নেতারা জানিয়ে দেন, ফুটপাথে হকার বসবে। কোথায় হকার বসবে, আর কোথায় বসবে না তা নিয়ে কোনও বিভাজন তাঁরা মানবেন না। বেলেঘাটার খালধারে পুরসভা হকারদের পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করে দিলেও হকাররা সেখানে যাননি কেন? শক্তিমানবাবু বলেন, “আমরা নির্বাসনে যাব না। পুনর্বাসন দিলে বিবেচনা করব।” তবে হকারদের ফুটপাথে বসতে দিতে হবে বলে দাবি তুললেও শক্তিমানবাবু নিজেও মানছেন, বহু এলাকার ফুটপাথ হকারদের দাপটে হাঁটার অযোগ্য হয়ে উঠেছে। যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। তিনি বলেন, “ওই সব হকাররা হকারদের শত্রু। আমরা বার বার ওঁদের সংযত করার চেষ্টা করছি।” |