অবশেষে সমস্ত প্রশাসনিক বাধা কাটিয়ে রাজারহাটে ৪০ একর জমির উপর ক্যাম্পাস তৈরির কাজে হাত দিতে চলেছে দেশের পয়লা নম্বর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)। নয়া ক্যাম্পাসে আরও ১৬ হাজার কর্মী কাজ করবেন বলে রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে তারা। রাজ্যে সংস্থার ৮টি অফিসে আছেন ১৫ হাজার কর্মী। সময়সীমা না জানালেও সংস্থা দ্রুত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে দাবি রাজ্যের।
বুধবার সল্টলেকে ওয়েবেল ভবনে শিল্প তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন টিসিএসের এমডি-সিইও এন চন্দ্রশেখরন ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অজয়েন্দ্র মুখোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে পার্থবাবু জানান নতুন ক্যাম্পাসে অন্যান্য কাজকর্মের পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। সংস্থার তরফে অবশ্য এ নিয়ে মুখ খোলেননি কেউ। তাদের দাবি এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ।
এখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে সফটওয়্যার রফতানির সিংহভাগই টিসিএস-এর দখলে। গত অর্থবর্ষে ২,৪৮৭.২৭ কোটি টাকার রফতানি করেছে সংস্থা। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলের দাবি, ক্যাম্পাসটি তৈরি হলে অঙ্কটা এক লাফে অনেকটা বাড়বে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, অন্তত ২০ হাজার কর্মী কাজের সুযোগও পাবেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এই প্রকল্প চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল ২০১১-তে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে গিয়ে পদে পদে প্রশাসনের চৌকাঠে ঠোক্কর খেয়েছে প্রায় ৩৭,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা করা এই সংস্থা। ২০০৮-এ একর প্রতি দেড় কোটি টাকা দরে জমি কিনলেও প্রকল্পের কাজ এগোতে পারেনি সংস্থা। ২০০৯-এ জমি হাতেও আসে। কিন্তু তার পরেও দু’বার জমির পুনর্বিন্যাস হয়। চৌকো আকারের জমি ইংরেজি অক্ষর ‘এল’-এর মতো দাঁড়ায়। তাও মেনে নিয়েছিল সংস্থা। কিন্তু এর পরে লাল ফিতের ফাঁসে আটকে যায় প্রকল্প তৈরির নকশাই। কারণ নকশা অনুমোদন করার পরিকাঠামোই নেই রাজারহাট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)-র। নকশা খতিয়ে দেখতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের কাছে নথি পাঠায় এনকেডিএ। আর অনুমোদনের অভাবে কাজ শুরুই করতে পারেনি টাটা রিয়্যালটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার্স। টাটা গোষ্ঠীর এই সংস্থাই প্রকল্প তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে।
সমস্যায় জেরবার হয়ে এক সময়ে হাল প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, প্রায় ১০০০ কোটি টাকার লগ্নির সঙ্গে রাজ্য হারাতে বসেছিল বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগও। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে শিল্প তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জট ছাড়াতে নিজে ময়দানে নামেন। গত বছর জুলাইয়ে নকশার অনুমোদন পায় সংস্থা। |