উৎপাদন করেও বাজারে পণ্যের সঠিক দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। এমনকী ধান উৎপাদনের পরেও তা বিক্রি করতে নাজেহাল তাঁরা। এর মূল কারণ, কৃষিপণ্য মজুত করার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর অভাব। তাই হিমঘর, গুদামের মতো কৃষিপণ্য সংরক্ষণের পরিকাঠামো গড়তে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ৮ শতাংশ সুদে অর্থ জোগাবে জাতীয় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক নাবার্ড। যাতে ওই ধরনের পরিকাঠামো প্রকল্পে ঋণ জোগাতে আগ্রহী হয় ব্যাঙ্কগুলি। এমনকী পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতে কিছু ক্ষেত্রে ওই সুদ ৭.৫ শতাংশে নেমে যাবে, জানায় কৃষি-পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে টাকার অন্যতম জোগানদার এই সংস্থা।
বুধবার রাজ্যে কৃষিঋণ সংক্রান্ত আলোচনাসভায় এই সমস্যার কথা তোলেন নাবার্ডের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর কে নারায়ণন। তিনি বলেন, “ধান উৎপাদনের পরেও তা বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকেরা। প্রশ্ন হল, উৎপাদনের পরেও যদি তাঁরা পণ্য বিক্রি করতে না-পারেন, তবে কেন ব্যাঙ্কককককককণ নিতে আগ্রহী হবেন তাঁরা? আর কেনই বা তাঁদের ঋণ দিতে চাইবে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি?” অর্থাৎ, অবস্থা না-বদলালে কৃষিঋণ দিতে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির আগ্রহ আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
কৃষিপণ্য সংরক্ষণে পরিকাঠামোর এই ঘাটতি যে সত্যিই বড় সমস্যা, তা মানছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও। তা মোকাবিলায় লগ্নি টানার পাশাপাশি আধুনিকতম প্রযুক্তি আনাও যে একান্ত জরুরি, তা স্পষ্ট জানান তিনি। তবে বহু ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দিলে এই সমস্যার অন্তত কিছুটা সুরাহা হত কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। অর্থমন্ত্রীর কথায়, “এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। যা বলার, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আগেই স্পষ্ট জানিয়েছেন।” তবে তাঁর দাবি, ওই পরিকাঠামো গড়ায় বিভিন্ন ভাবে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। এ প্রসঙ্গে নারায়ণনও জানান, “বিদেশি লগ্নি এলে ভাল হত কি না, তা নিয়ে মন্তব্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এটুকু বলতে পারি যে, এই পরিকাঠামো তৈরি হওয়া একান্ত জরুরি। তা সে সরকারি উদ্যোগেই হোক বা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে।”
এ দিন আলোচনার শেষে মূলত পাঁচটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। l নাবার্ডের পরিকল্পনা মাফিক রাজ্যে দ্রত স্মার্ট কিষাণ ক্রেডিট কার্ড চালুর চেষ্টা করা। যাতে ঋণ পেতে ব্যাঙ্কে হাজিরা দেওয়ার পরিবর্তে মোবাইলের মাধ্যমেই তা পেতে পারেন কৃষকেরা। l মাছ চাষ, মুরগি প্রতিপালন এবং ডেয়ারিজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ কমিটি গঠন। l কৃষি ক্ষেত্রে এবং কৃষিপণ্য সংরক্ষণে আধুনিকতম প্রযুক্তি ও লগ্নি আনতে উদ্যোগ। l কৃষি ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছোট ও মাঝারি ব্যবসায় উৎসাহ দিতে বিশেষ কমিটি। l আরও বেশি সংখ্যক মানুষ যাতে বেশি পরিমাণে কৃষিঋণ পান, তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ‘ক্রেডিট কমিটি’ গঠন। এই কমিটিগুলিতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, নাবার্ড এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই সামিল করার প্রস্তাব দিয়েছেন অমিতবাবু। |