এ যেন ষষ্ঠীর আগে থেকেই দুর্গাপুজো উদ্বোধনের হুড়োহুড়ি। কলকাতার নামী পুজোর উদ্যোক্তাদের এই থিমের চমক আগেভাগে দেখিয়ে দর্শক টানার ধাঁচেই, অটো-এক্সপো শুরুর আগেই নিজেদের গাড়ি দেখাতে উন্মুখ প্রথম সারির বিভিন্ন গাড়ি সংস্থা। লক্ষ্য ক্রেতা টানার দৌড়ে বাজি জেতা।
রাজধানীতে আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অটো-এক্সপো-র। চলবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু মেলা শুরুর আগেই নজর টানতে আলাদা ভাবে নিজেদের নতুন গাড়ির আবরণ উন্মোচনের পথে হাঁটছে বিভিন্ন সংস্থা। মঙ্গলবার বজাজ অটোর পরে আজ ফোর্ড ইন্ডিয়া-ও তাদের নতুন এসইউভি ইকোস্পোর্ট-এর আবরণ উন্মোচন করল।
মেলার প্রথম দিনটি বরাবরই সংবাদংমাধ্যমের জন্য নির্দিষ্ট। সাম্প্রতিক কালে ন্যানো-র আত্মপ্রকাশের ঘোষণা এই মেলাকে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজরে এনে দিয়েছিল। গাড়ি শিল্পের সংগঠন সিয়াম জানিয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় ৫০টি গাড়ি (দু’চাকা থেকে শুরু করে চার চাকার) ও ‘কনসেপ্ট কার’ (ভবিষ্যতে যেগুলির ভিত্তিতে তৈরি হবে নতুন গাড়ি) দেখা যাবে। এর মধ্যে দেশীয় যাত্রী-গাড়ি ৪১টি, বিদেশি ৯টি। সিয়াম জানিয়েছে, এ বারই প্রথম মেলায় প্রদর্শিত হবে ফেরারি, ল্যাম্বরঘিনি, পোলারিস, পোর্শের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড। এ ছাড়া দ্বিচক্রযান ও বাণিজ্যিক গাড়িরও উদ্বোধন হবে। |
মারুতি তাদের প্রথম ‘মাল্টি পারপাস ভেহিকল’ (এমপিভি) আর্টিগা এবং একটি স্পোটর্স ইউটিলিটি ভেহিকল (এসইউভি) আনছে। দ্বিতীয়টি অবশ্য ‘কনসেপ্ট কার’। মহীন্দ্রার যৌথ উদ্যোগ স্যাংইয়ং-এর রেক্সটন ও কোরান্ডো গাড়ি দু’টিও প্রদর্শিত হবে। তিন দরজার ভেলোস্টার এবং এলান্ট্রা গাড়ির সঙ্গে হুন্ডাই দেখাবে একটি কনসেপ্ট কার-ও। মার্সিডিজ বেঞ্জ তাদের এ-ক্লাস গাড়িটির ‘কনসেপ্ট’ মডেল দেখানোর পাশাপাশি এ দেশে আনবে এসএলএস এএমজি রোডস্টার। মহীন্দ্রা তাদের বৈদ্যুতিন গাড়ি রেভা এনএক্সআর এবং ভেরিটো প্রদর্শন করবে। এ ছাড়া পোলারিস ও ট্রায়াম্ফ-এর পাশাপাশি বিএমডব্লিউ-র মিনি ও মোটোর্যাড, পিএসএ পুজো, নিসানের মতো সংস্থাও একাধিক গাড়ি আনছে।
ফোর্ড ইন্ডিয়ার আনকোরা গাড়ি ইকোস্পোর্ট ভারতেই প্রথম প্রদর্শিত হল। এ জন্য ভারতে উড়ে এসেছেন ফোর্ড কোম্পানির শীর্ষ কর্তা অ্যালান মুলালি ও অন্যরা। এক লিটার পেট্রোল ইঞ্জিনের গাড়িটির উৎপাদন কয়েক মাসেই শুরু হবে। বছর দুয়েক আগে একই কায়দায় এই মেলা থেকেই ফিগো-র উদ্বোধন করেন মুলালি।
তবে গাড়ি প্রদর্শন করেও অন্যান্য বছরে বহু সংস্থাই শেষ পর্যন্ত তা বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে আনে না। বিশেষত হাইব্রিড বা বৈদ্যুতিন গাড়িগুলি। যেমন, ক’বছর আগে মারুতি এসএক্স ফোর ও সুইফট এবং মহীন্দ্রা স্করপিও গাড়িটির হাইব্রিড মডেল শুধু প্রদর্শন করেই ক্ষান্ত থেকেছে। ব্যবসায় নামেনি। এ বার জিএম শেভ্রোলে হাইব্রিড ভোল্ট গাড়ি প্রদর্শন করার কথা ভাবলেও এখনই বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রির পরিকল্পনা নেই। সিয়াম ও কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে উপদেষ্টা সংস্থা ‘বুজ অ্যান্ড কোম্পানি’ সম্প্রতি ১৬টি শহরে এক সমীক্ষায় দেখেছে, ২০২০-র মধ্যে ভারতে ৫০-৭০ লক্ষ হাইব্রিড বা বৈদ্যুতিন গাড়ি বিক্রির সম্ভাবনা আছে। সম্ভাবনার এই বাজার বাস্তবায়িত করার দিশা পেতে এ বার অটো এক্সপো-য় এই ধরনের প্রযুক্তির উপর জোর দিচ্ছে সিয়াম। আগামী কাল পালিত হবে প্রযুক্তি দিবস, যেখানে এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরাই আয়োজকদের মুখ্য উদ্দেশ্য। শিল্পমহলের অভিযোগ, দেশে এই গাড়ি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের পরিকাঠামো না-থাকায় ব্যবসা লাভজনক নয়। জিএম কর্তা পি বলেন্দ্রনের দাবি, এখনও সেই বাজার এ দেশে তৈরি হয়নি। মারুতি-কর্তা শশাঙ্ক শ্রীবাস্তব বলেন, “ব্যাটারি চার্জ করানোর পরিকাঠামোই নেই।’’ |