‘দার্জিলিং কলিং’! এই স্লোগানকে সামনে রেখে চিত্রপরিচালকদের জন্য ‘ডিরেক্টরস মিট’। ‘কুইন অফ হিলস্’-এ আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ওই অনুষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ‘চা-পর্যটন উৎসব কমিটি’। ইতিমধ্যেই কমিটির তরফে বলিউড ও টলিউডের একাধিক পরিচালক, চিত্রতারকার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়ে গিয়েছে।
দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। দার্জিলিঙের এখনকার পরিবেশ দেখে মহিমা চৌধুরী, মহেশ ভট্ট, অঞ্জন দত্ত-সহ অনেকেই শ্যুটিংয়ের ব্যাপারে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। সে কথা মাথায় রেখেই আমরা ওই ‘মিট’ করতে চলেছি।”
‘ডিরেক্টরস মিট’-এর মানে কিন্তু বদ্ধ হলঘরে আলোচনাসভা নয়। তৈরি করা হচ্ছে নানা সম্ভাব্য শু্যটিং স্পট-এর তালিকা। সে সব জায়গা পরিচালকদের সরেজমিনে দেখানো হবে। সেখানে কী ধরনের পরিকাঠামো তৈরি করা দরকার, সেই ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শ নিয়ে তা রূপায়ণ করার চেষ্টাও হবে। প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থাকেও বিনিয়োগের জন্য ডাকা হবে বলে উদ্যোক্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শু্যটিংয়ের জন্য যে সব অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা জরুরি, তা যাতে এক জায়গা থেকে মেলে সেই ব্যবস্থাও করা হবে। নানা ছাড়পত্রের জন্য বিভিন্ন দফতরে ঘোরাঘুরির হাত থেকে রেহাই দিতে তৈরি হবে ‘বিশেষ সেল’। |
বলিউড ও টলিউডের কাছে ‘লোকেশন’ হিসেবে দার্জিলিংয়ের আলাদা একটা আকর্ষণ ছিল অনেক দিনই অটুট ছিল। ১৯৬২ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র শু্যটিংয়ের কথা এখনও প্রবীণদের মুখে মুখে ফেরে। তার সাত বছরের মাথায় শক্তি সামন্তের ‘আরাধনা’ সিনেমার শু্যটিং ঘিরে পাহাড় জুড়ে ছিল উন্মাদনা। ১৯৭৯ সালে মহেশ ভাটের ‘লহু কে দো রং’ সিনেমার চিত্রগ্রহণ হয় কালিম্পং-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। ওই সিনেমার জন্য হংকংয়ের পাশাপাশি দার্জিলিংকেই বেছে নিয়েছিলেন পরিচালক।
কিন্তু আশির দশক থেকে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের জেরে দার্জিলিঙে শু্যটিং প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফের ২০০৪ সালে ফারহা খানের ‘ম্যায় হুঁ না’-র শু্যটিং করতে দার্জিলিঙে যান শাহরুখ খান। ২০০৫ সালে প্রদীপ সরকারের ‘পরিণীতা’ ছবির দৃশ্যগ্রহণও হয় দার্জিলিঙে। অঞ্জন দত্তের ‘চলো, লেটস গো’-রও শু্যটিং দার্জিলিঙে। কিন্তু তার পরে আবার সুবাস ঘিসিংকে সরিয়ে বিমল গুরুঙ্গের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার উত্থান ও আন্দোলনে ফের জৌলুস হারিয়ে ফেলে শৈলশহর। রাজ্যের ক্ষমতা হাতবদলের পরে ধীরে ধীরে অবশ্য পাহাড়ের পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। ২০১১ সালের জুন মাসেই অনুরাগ বসু ‘বরফি’ সিনেমার শু্যটিং করতে আসেন দার্জিলিঙে। কিন্তু অত্যুৎসাহী জনতার চাপ সামাল দিতে ব্যর্থ হয় পুলিশ-প্রশাসন। তা নিয়ে প্রকাশ্যে সরব হন পরিচালক। পরে পুলিশ-প্রশাসন ও মোর্চা নেতৃত্ব আসরে নেমে পরিস্থিতি সামাল দেন। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে চিত্রগ্রহণের সময় ভিড়ের চাপ সামাল দেওয়ার জন্য পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের বিশেষ প্রশিক্ষণর দেওয়ার কাজ এগোচ্ছে পাহাড়ে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সামিল হয়েছেন প্রায় সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
চা-পর্যটন উৎসব ঘিরে দার্জিলিঙে এখন পর্যটকদের ঢল। তাতে যোগ দেন মুম্বই, কলকাতার তারকারা। আজ, বৃহস্পতিবার উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠান। সেখানে মহেশ ভট্ট, বিধুবিনোদ চোপড়া, অঞ্জন দত্ত, আরবাজ খান, মহেশ মঞ্জরেকর-সহ অনেকেরই থাকার কথা। ‘‘দার্জিলিং কলিং!” পাহাড়ের আশা, চলচ্চিত্র জগতও সাড়া দিয়ে বলে উঠবে, ‘চলো লেটস গো’! |