মমতাকে বোঝাতে আসছে মার্কিন সেনেটর-দল
প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনড় মনোভাবের জেরে যখন অনিশ্চিত দেশ ও এই রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতি, ঠিক সেই সময় রাজ্যে আসছেন মার্কিন সেনেট কর্তারা। আগামী সপ্তাহের শেষে মার্ক ওয়ার্নারের নেতৃত্বে মার্কিন সেনেটের পাঁচ সদস্যের একটি দল কলকাতায় আসবে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, খুচরো বিক্রি, পেনশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে মার্কিন বিনিয়োগ নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের কঠোর মনোভাব কিছুটা নরম করার চেষ্টা করবেন তাঁরা। পাশাপাশি খতিয়ে দেখবেন রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনাও।
৩৪ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হলে আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের দিকটি সুবিবেচনা পাবে গোড়ায় এমনটাই ধারণা ছিল ওবামা প্রশাসনের। আমেরিকার আশা ছিল, সিপিএম জমানায় যা সম্ভব হয়নি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলে তা হবে। অর্থাৎ, নতুন মুখ্যমন্ত্রী আরও বেশি করে সংস্কারের পথে হাঁটবেন। এবং ক্রমশ রাজ্যে মার্কিন বিনিয়োগের রাস্তা তৈরি হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ঘটছে ঠিক বিপরীত। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, বামেদের থেকেও বেশি বামপন্থী রাস্তায় হাঁটছেন মমতা। কমিউনিস্ট নেতা হওয়া সত্ত্বেও ২০০৫ সালে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তা-ও বহুজাতিক খুচরো ব্যবসায়ী সংস্থা ওয়ালমার্টের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। বুদ্ধবাবু জানিয়েছিলেন, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে তাঁর সরকার। কিন্তু কমিউনিস্ট না হওয়া সত্ত্বেও এ বিষয়ে মমতা আরও অনেক বেশি অনড়। তিনি প্রায় একা হাতে আটকে দিয়েছেন খুচরো বিক্রিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বিষয়ক বিল। এই ব্যবসায় আমেরিকার বড় সংস্থাগুলি প্রবেশাধিকার পেলে ছোট দোকানদার এবং কৃষকদের উপর আঘাত আসবে এমন আশঙ্কার কথা তিনি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। মমতার রাজনৈতিক বার্তা ‘মা-মাটি-মানুষের নেত্রী’ হয়ে তিনি এমন কিছু করতে পারেন না, যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা বুঝতে ওয়ার্নাররা কলকাতা আসছেন। খুচরো ব্যবসা, বিমাক্ষেত্র, পেনশন এই তিনটি ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে ভারতের গড়িমসি দু’দেশের সম্পর্কে কিছুটা শীতল করে দিয়েছে। ২০১০ সালে ভারত সফরে এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিষয়গুলির উপর জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও এই সব ক্ষেত্রে একফোঁটা অগ্রগতি হয়নি।
গোটা বিষয়টি নিয়ে কিছুটা চাপ বাড়াতে ৯ তারিখ দিল্লি আসছেন ওয়ার্নাররা। প্রতিনিধিদলে থাকবেন, জোসেফ ক্রাউলি, মিশেল বেনেট, ফ্রেডরিক রিচমন্ডের মতো সেনেটররা যাঁরা মার্কিন সেনেটের ভারত বিষয়ক ‘কক্কাস’-এরও সদস্য। এখনও পর্যন্ত স্থির রয়েছে দিল্লি, জয়পুর এবং হায়দরাবাদ সফর সেরে কলকাতা যাবেন তাঁরা। ওই রাজ্যগুলিতেও মার্কিন লগ্নি নিয়ে কথা হবে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ওবামার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই মার্ক ওয়ার্নারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কলকাতা-সহ ভারতে সার্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি যাচাই করে দেখতে এবং ভারতের কর্তাদের মার্কিন বিনিয়োগ নিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মার্কিন কর্তারা যে সময় আসছেন, তখন কলকাতায় চলবে শিল্প অধিবেশন। খুচরো ব্যবসা নিয়ে জটিলতার পর দেশ-বিদেশের শিল্পকর্তাদের ডেকে রাজ্যের অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের একটি চেষ্টা শুরু করেছেন মমতাও। এই সম্মেলন তারই অংশ। সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা জেনারেল মোটরসের কর্তা ক্রিস্টোফার বারুনি, সিঙ্গাপুরের দশ জনের একটি প্রতিনিধিদলের। থাকবেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজও।
কেন্দ্রীয় সরকারের একটি অংশের পাশাপাশি ওবামা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জোরদার চেষ্টা চলছে যাতে খুচরো ব্যবসা, পেনশন ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে ভারতে রাজনৈতিক সর্বসম্মতি তৈরি করা সম্ভব হয়। আরও একটি মন্দার মুখোমুখি দাঁড়ানো মার্কিন নেতৃত্বের কাছে ভারতের সুবিশাল বাজার ধরাটা অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি আমেরিকার একটি বড় প্রতিনিধিদল এসে বিষয়টি নিয়ে ‘ট্র্যাক-টু’ সেরে গিয়েছেন দেশের রাজনৈতিক কর্তাদের সঙ্গে। মার্কিন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী উইলিয়াম বার্নসও নয়াদিল্লি এসে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য ছিল, কৌশলগত এবং পরমাণু ক্ষেত্রের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও জোরদার করা আশু প্রয়োজন। দু’দেশের স্বার্থই এর ফলে রক্ষিত হবে। ভারত যাতে ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধা কাটিয়ে বিদেশি সংস্থাগুলিকে দেশীয় বাণিজ্যে ঢোকার ছাড়পত্র দেয়, সে জন্য প্রতিনিয়ত চাপ বজায় রাখছে ওয়াশিংটন।
নয়াদিল্লিতে এসে এই কূটনৈতিক দৌত্য করে গেলেও গোটা বিষয়টিতে যিনি প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেই মমতার সরকারের সঙ্গেই এখনও কোনও কথা হয়নি টিম-ওবামার। এ বার সে ব্যাপারেই তৎপরতা দেখাচ্ছে হোয়াইট হাউস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.