|
|
|
|
গাড়ির নম্বর প্লেটে নাম থেকে ছবি, শুরু প্রচার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
কোনও গাড়ির নম্বর প্লেটে লেখা, ‘মা ঘাগরবুড়ি’। কোথাও আবার লেখা শুধুই ‘জয়গুরু’। কোথাও অবশ্য নম্বরের অস্তিত্বটুকু আছে। কিন্তু নেই কোনও মাথামুণ্ডু।
আসানসোল মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে এমন ভাবেই চলছে বহু গাড়ি। বিশেষ করে স্কুটার, মোটরবাইক, ছোট ভাড়া গাড়ি ও ব্যক্তিগত গাড়িতে এই অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। পরিবহণ আইনের নির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে লাগানো ওই প্লেট এখন পুলিশের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসিপি (ট্রাফিক) সুবিমল পাল বলেন, “আমরা সচেতনতামূলক অভিযান শুরু করেছি। চালকদের ধরে ধরে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নম্বর প্লেট লাগানোর নির্দেশ দিয়েছি।”
জানা গিয়েছে, ‘বিশেষ নম্বর প্লেট’ লাগানোর কাজ ধাপে ধাপে শুরু হবে আসানসোল দুর্গাপুরেও। কেন এই বিশেষ নম্বর প্লেট? মূলত নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক স্বার্থে ২০০৫-এর ১ জুন থেকে রাজ্যের সর্বত্র গাড়িতে এই ‘হাই সিকিউরিটি রেজিস্ট্রেশন প্লেট’ (এইচএসআরপি) বসানোর নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। আইনি বাধায় ২০১০ পর্যন্ত কাজে হাত দেওয়াই যায়নি। দফায় দফায় বৈঠকের পরে ২০১১-র ১ জানুয়ারি তা শুরু হয় কলকাতায়। তার পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়িতে। সব মিলিয়ে হাতে গোনা পাঁচটি জেলায়। বর্ধমানে এখনও এই কাজ শুরু হয়নি।
এই অবস্থায় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে গাড়ির নম্বর লাগানো নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশ।
ঠিক কী ধরনের বিশৃঙ্খলা গাড়ির নম্বর প্লেটে দেখা যাচ্ছে? সরেজমিনে তদন্ত করে পুলিশ জানিয়েছে, বেশির ভাগ স্কুটার ও মোটরবাইকের নম্বর প্লেটে নম্বর লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কথা লেখা হচ্ছে। কখনও হচ্ছে ছবি আঁকা। কখনও আবার বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অবস্থায় গাড়ির নম্বরগুলি ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশ আরও লক্ষ করেছে, বেশ কিছু ভাড়ার গাড়িতে নম্বর প্লেটই লাগানো হয়নি। সামনে বা পিছনে কোনও একটি জায়গায় অস্পষ্ট ভাবে নম্বরটি লেখা হয়েছে। যা ঠিকমতো পড়াই যাচ্ছে না। ব্যক্তিগত চার চাকা গাড়িতে অনেকে চকচকে নম্বর প্লেট লাগাচ্ছেন। আলোর প্রতিফলনে সেই নম্বরগুলি পড়া যাচ্ছে না। এ ছাড়াও রয়েছে নানা বিকৃতি। |
|
এ তো নমুনা মাত্র। নিজস্ব চিত্র। |
অথচ, গাড়ির নম্বর প্লেট লাগানোর নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, দু’ চাকা ও তিন চাকার গাড়ির জন্য ২০০ মিলিমিটার চওড়া ও ১০০ মিলিমিটার উচ্চতার, ছোট চার চাকা গাড়ির জন্য ৩৪০ মিলিমিটার চওড়া ও ২০০ মিলিমিটার উচ্চতা এবং বড় গাড়ির জন্য ৫০০ মিলিমিটার চওড়া ও ১২০ মিলিমিটার উচ্চতার নম্বর প্লেট লাগাতে হবে। ভাড়া গাড়ি বা যাত্রী ও পণ্যবোঝাই গাড়িতে হলুদের উপরে কালো হরফে এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে সাদার উপরে কালো হরফে নম্বর লিখতে হবে। এই নির্দেশিকা সর্বত্রই জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কমিশনারেট সূত্রে জানানো হয়েছে, হাই সিকিউরিটি রেজিস্ট্রেশন প্লেট বিশেষ সুবিধাজনক। ক্রোমিয়ামের চাদরে নির্দিষ্ট হলোগ্রাম লাগানো থাকবে ওই নম্বরপ্লেটে। অনেক দূর থেকে সহজেই তা চোখে পড়বে। ফলে যে কোনও অপরাধ ও কারচুপিও রোখা যাবে সহজেই। পুলিশের কাজও অনেকটা সহজ হবে। এসিপি (ট্রাফিক) জানিয়েছেন, নতুন ধরনের নম্বর প্লেট চালুর আগে গাড়ির নম্বর সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য বর্তমানে সংগ্রহ করছে পুলিশ। এছাড়া, শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহণ বিধি লঙ্ঘন নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো-ও শুরু হয়েছে শহরবাসীকে। ডাকযোগে মিলবে লাইসেন্স। এ বার থেকে সমস্ত যানবাহনের চালকদের লাইসেন্স, পারমিট এবং বিক্রির পরে নতুন মালিকের নাম নথিভুক্তকরণ সংক্রান্ত কাগজ-সহ পরিবহণ দফতরের নথিপত্র মিলবে বাড়িতে বসেই। নতুন বছরে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বাস্তবের রূপ দিতে ডাক বিভাগের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধল জেলা পরিবহণ দফতর। বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন জেলা পরিবহণ নিয়ামক অনির্বাণ কোলে। ছিলেন বর্ধমান মুখ্য ডাকঘরের জনসংযোগ আধিকারিক দেবকুমার চট্টোপাধ্যায়, জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। নতুন ব্যবস্থায় জেলার সর্বত্র সাত দিনের মধ্যে দরকারি নথিপত্র পাবেন জেলার মানুষ। বর্ধমান শহরের বাসিন্দারা অবশ্য পাবেন দু’দিনের ভিতরে। তবে এর জন্য দিতে হবে অতিরিক্ত ৫০ টাকা। |
|
|
|
|
|