পাড়ার চায়ের দোকান, মাছবাজার, চাটভান্ডার, বাসস্ট্যান্ড, আমবাগানে রমরমিয়ে চলছে অবৈধ চোলাইয়ের ঠেক ও জুয়ার আসর। শুধু তাই নয়, স্কুলের পেছনে, শিবমন্দিরের পাশে, এমনকী গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরের পেছনেও চোলাইয়ের ঠেক চলছে রমরমিয়ে। দীর্ঘদিন ধরেই একই এলাকায় রমরমিয়ে চলছে ১১টি চোলাইয়ের ঠেক। সঙ্গে জুয়ার আসর। ফলে যা হওয়ার সেটাই ঘটছে। সহজলভ্য হওয়ায় ২০-৩০ বছরের ছেলেরা নেশায় আসক্ত হচ্ছে। মালদহের চাঁচলের কলিগ্রাম এলাকায় সন্ধ্যার পর মাতালদের অত্যাচারে মহিলাদের বাড়ি থেকে বের হওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খোদ চাঁচল মহকুমা প্রশাসনের তদন্তেই উঠে এসেছে ওই তথ্য। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, আবগারি দফতর ও পুলিশকে বহু বার জানিয়েও ফল হয়নি। ওই অভিযোগ তুলে মদ্যপদের হাত থেকে বাঁচানোর আর্তি নিয়ে মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এলাকার মহিলারা। তারপরই তদন্তে নেমে ওই তথ্য দেখে বিস্মিত প্রশাসনের কর্তারাও। আবগারি দফতর ও পুলিশ করছেটা কী তা নিয়েও প্রশাসনের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। চাঁচলের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “এলাকার মহিলাদের অভিযোগ পেয়েই মহকুমা প্রশাসন তদন্তে নামে। রিপোর্ট পাওয়ার পরেই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আবগারি দফতর ও পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বহু এলাকায় দেখা যাচ্ছে মহিলারা নিজেরাই চোলাইয়ের ঠেক ভাঙতে পথে নামছেন। সেটা কেন হবে? তাহলে পুলিশ, প্রশাসন রয়েছে কেন!” আবগারি দফতরের মালদহের জয়েন্ট কমিশনার সৌমিত্র বিশ্বাস বলেন, “গত ১৯ ডিসেম্বর মালদহের দায়িত্ব নিয়েই দফতরের প্রত্যেককেই নিয়মিত ভাবে তল্লাশি চালানোর কথা জানিয়ে দিয়েছি। তা শুরুও হয়েছে। কলিগ্রামের পাশাপাশি অন্যত্রও অভিযোগ পেলেই অবৈধ ঠেক বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, চাঁচল থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে কলিগ্রাম এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই ওই ঠেকগুলি চলছে। আবগারি দফতর, পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকায় ওই ধরনের ঠেকের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বাধ্য হয়েই গত ১৬ ডিসেম্বর মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন এলাকার মহিলারা। এরপরই দুই সদস্যের কমিটি গড়ে তদন্তে নামে প্রশাসন। অবৈধ মদের ঠেক আর জুয়ার রমরমায় এলাকার পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে তা ওই তদন্তেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে। প্রশাসনের তদন্তেই উঠে এসেছে যে, মদ, জুয়ার ঠেকের রমরমা ওই এলাকায় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে ঠেক মালিকদের নামও। ঠেকগুলিতে নিয়মিত ভিড় বাড়ছে তরুণ ও যুবকদের। মহিলাদের দেখলেই অশালীন মন্তব্য, কটূক্তি ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। নেশাসক্তের সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকায় ওই এলাকায় ঘরে ঘরে বাড়ছে অশান্তি। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, পরিস্থিতি এখনও আয়ত্বের বাইরে নয়। তাঁর দাবি, “বেআইনি মদের ঠেক বন্ধে পৃথক একটি দফতর রয়েছে। তবু পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালানোয় পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যায়নি।” এলাকার সুমনা মন্ডল, মালা প্রামাণিক, রেনুকা দত্তদের আর্তি, “এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। মদ্যপদের অত্যাচারের হাত থেকে আমরা বাঁচতে চাই। মদ, জুয়ার আসর ভাঙতে না-পারলে যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।” |