রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের হাতে নিগৃহীত হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান কর্তব্যরত চিকিৎসক। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতালে এসে সকাল পর্যন্ত ডিউটি করেন বীরভূম জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মল্লিক। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ি সদর হাসপাতালে। আশিসবাবু বলেন, “ঘটনার সময়ে দু’জন চিকিৎসক ছিলেন। খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে যাই। চিকিৎসক গৌতম রায় চলে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি নিজে রবিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেলে পিকনিক করে ফেরার সময়ে দুর্ঘটনায় পড়ে একটি গাড়ি। জখম অবস্থায় চার জনকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তখন জরুরি বিভাগে ছিলেন গৌতমবাবু। উদ্ধারকারীদের দাবি, কার্যত আহতদের চিকিৎসা না করে কর্তব্যরত চিকিৎসক বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দেন। এর পরেই ক্ষুব্ধ লোকজন ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরে ‘ভাঙচুর’ করেন, গৌতমবাবুকে ‘হেনস্থা’ করেন। গৌতমবাবুর দাবি, “কিছু লোক আমাকে যখন নানা রকম হুমকি দিচ্ছিল, হাত ধরে টানাটানি করছিল তখন হাসপাতালের অনেক কর্মী দেখেও এগিয়ে আসেননি। এমন কী ওই দিন সুপারের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। তাই আতঙ্কে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাই।”
হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “রবিবার আমি ছিলাম না। সিএমওএইচকে জানিয়েছিলাম। সোমবার স্বাস্থ্যভবনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রবিবারের পরিস্থিতির কারণে হাসপাতালে চলে আসি।” তাঁর ক্ষোভ, “এই ঘটনা যে কোনও দিন হতে পারে। কারণ এখানে চার জন শল্য চিকিৎসকের মধ্যে দু’জন চার বছর ধরে নেই। বাকিদের মধ্যে এক জন মায়ের অসুস্থতার জন্য ছুটিতে আছেন। আর এক জন অন্যত্র বদলি হয়ে গিয়েছেন। এই অবস্থায় রামপুরহাট ও বোলপুর থেকে শল্যচিকিৎসককে আনা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ৮ জন ওয়ার্ড মাস্টারের জায়গায় আছেন চার জন।”
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের অভিযোগ, একটু বাড়াবাড়ি হলেই বর্ধমান বা কলকাতায় রেফার করে দেওয়া হয়। মহম্মদবাজারের নিমদাসপুরের বাসিন্দা সুশান্ত দাসের অভিযোগ, “রবিবার আমি এবং পড়শি রামপ্রসাদ হাজরা মোটরবাইকে করে বাড়ি ফিরছিলাম। একটা গাড়ি বাইকে ধাক্কা মারে। তখন স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ এক চিকিৎসক এসে ব্যান্ডেজ করে ও ইনঞ্জেকশন দিয়ে চলে যান। সোমবার সকাল পর্যন্ত আর কোনও চিকিৎসকের দেখা নেই।”
সিএমওএইচ আশিস মল্লিক বলেন, “চিকিৎসা করা হয়নি বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা ঠিক নয়। আমি নিজেও তাঁদের দেখেছি। তবে আঘাতের কথা বিবেচনা করেই তাঁদের বর্ধমানে রেফার করা হয়েছিল। তবে কোন পরিস্থিতিতে এমন ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে। জরুরি ভিত্তিতে রামপুরহাট ও বোলপুর থেকে শল্য চিকিৎসককে এনে পরিতিস্থি সামাল দেওয়া হচ্ছে।” |