মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সমস্ত সরকারি হাসপাতালে পরিষেবার উন্নতিতে জোর দিচ্ছেন, তখনই একটি হাসপাতালের অনুষ্ঠানে তাঁর দলের একাধিক মন্ত্রী, নেতা ও সরকারি আধিকারিকের উপস্থিতিকে দায়ী করে সেখানকার পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ তুললেন কিছু রোগীর পরিজনেরা। মন্ত্রী, নেতা, আমলাদের সামনেই চলল বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিও। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিলে মন্ত্রীরা নিরাপদে ফিরে যান।
সোমবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়া জেলা হাসপাতালে। ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন রাজ্য শ্রম দফতরের পক্ষে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম অন্তর্ভুক্তির জন্য হাওড়া জেলা হাসপাতালে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়, সমবায় ও অভ্যন্তরীণ জল পরিবহণমন্ত্রী হায়দর আজিজ সফি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আহমেদ, হাওড়ার সাংসদ অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের শ্রম ও পুরসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র-সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয়, স্মার্ট কার্ড করে নিলে জেলার বিপিএল-তালিকাভুক্ত পরিবারপিছু চার জন বিনা খরচে হাওড়া জেলা হাসপাতাল-সহ কয়েকটি নথিভুক্ত নার্সিংহোমে বছরে ৩০ হাজার টাকার স্বাস্থ্যবিমা পাবেন। |
জনতার সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি। সোমবার, হাওড়া
জেলা হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র |
প্রাথমিক অনুষ্ঠানের পরে দুপুর ২টো নাগাদ মন্ত্রী, সাংসদ-সহ রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা যখন হাসপাতালের মেন বিল্ডিংয়ে দু’জন বিপিএল-তালিকাভুক্ত রোগীকে স্বাস্থ্য বিমার স্মার্ট কার্ড দিতে যান, তখনই গোলমাল বাধে। স্যালাইন দেওয়া অবস্থায় এক রোগীকে স্ট্রেচারে করে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁর পরিজনেরা ভিড়ের মধ্যেই চিৎকার করে ওঠেন, “এই মন্ত্রী-আমলারা এসেছেন বলে কি হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে। তা হলে রোগীরা বাঁচবেন কী করে?”
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে লিলুয়ার কোনা মোড়ে ম্যাটাডর ও মিনি ট্রাকের সংঘর্ষে আহত হন বাগনান কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা পঞ্চা কামার (৩৮) ও সুভাষ বাগদি (২৬)। দুর্ঘটনায় দু’জনেরই পা ভেঙে যায়। দুই আহতকে প্রথমে কোনা প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে ও পরে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন আত্মীয়েরা। কল্যাণ নস্কর নামে এক আত্মীয়ের অভিযোগ, “সকাল ১০টা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বসে আছি। দুপুর ২টো পর্যন্ত আহতদের কেউ দেখতে পর্যন্ত আসেননি। চিকিৎসকেরা জানালেন, মন্ত্রীরা আসছেন বলে তাঁরা ব্যস্ত।” একই অবস্থা সোনাম আলি মোল্লা ও জাকির আলি মোল্লার আত্মীয়দেরও। গত রবিবার দুপুরে বাকসাড়ার কাছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত এই দুই যুবকের কাকা সাজ্জাদ হোসেন মোল্লা বলেন, “রবিবার বিকেল ৩টে নাগাদ ওঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। তার পর থেকে আজ দুপুর ২টো পর্যন্ত আমরা মৃতদেহ পাইনি। চিকিৎসকেরা মৃতদেহ ছাড়ছেন না।”
হাসপাতালের সাহায্য না-পেয়ে রোগীর ক্ষুব্ধ আত্মীয়েরা যখন হাসপাতালের মেন বিল্ডিংয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তখন তাঁদের থামাতে একাই এগিয়ে আসেন জেলাশাসক সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ। তাঁদের অভিযোগ জানতে চান তিনি। পরিচয় পেয়েই তাঁকে ঘিরে ফের শুরু হয় বিক্ষোভ। পুলিশ তাদের ঠেলে সরাতে যায়। তখন পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি হয় বিক্ষোভকারীদের। শেষে বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর পরে পুলিশ পাহারায় হাসপাতাল থেকে বেরোন মন্ত্রী-আমলারা।
এই ঘটনার পরে হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত ভাবে ঘটানো হয়েছে। চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে বলে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ কেউ করেননি।” |