রোশনী মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
রাজ্যে স্কুল শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরনো মাত্রই তা নিয়ে ‘জটিলতা’ শুরু হয়ে গেল! সংরক্ষণ সংক্রান্ত ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের’ অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করল প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স উত্তীর্ণ (পিটিটিআই পাশ) ও পার্শ্ব শিক্ষকদের একাংশ। তাদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সংগঠনটি রাজ্যের প্রধান শাসক দল তৃণমূলেরই প্রভাবাধীন!
স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা শেষ বার হয় বামফ্রন্ট আমলে, ২০১০-এর অক্টোবর মাসে। রাজ্যে পালাবদলের পরে ফের ওই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরোল ২০১১-র ডিসেম্বরের শেষ লগ্নে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক পদপ্রার্থীদের স্বস্তি পাওয়ারই কথা। কিন্তু বাস্তবে তাঁদের একাংশ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুমকি দিচ্ছেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই শিক্ষক পদপ্রার্থীরা বাম আমলেও আন্দোলন করেছিলেন। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থন করায় তাঁদের আন্দোলন জোরদারও হয়। কিন্তু মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার মাত্র সাত মাসের মধ্যেই শিক্ষক পদপ্রার্থীদের একাংশ তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের’ অভিযোগ তুলছে!
তৃণমূল প্রভাবিত প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ ছাত্র ইউনিয়নের বক্তব্য, মমতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে পিটিটিআই সমস্যায় জেরবার ছাত্রছাত্রীদের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে wbsed.gov.in এই ওয়েবসাইটে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের যে ‘নোটিফিকেশন’ বেরিয়েছে, তাতে অন্য কয়েকটি গোষ্ঠীর সঙ্গে ভুক্তভোগী পিটিটিআই পড়ুয়াদের যোগ করে সার্বিক ভাবে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ওই ছাত্র ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক পিন্টু পাড়ুই বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া কথা রাজ্য সরকার রাখল না! আমরা চাই কেবল ভুক্তভোগী পিটিটিআই পড়ুয়াদের জন্যই ১০ শতাংশ সংরক্ষণ থাকুক। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।” কাজ না হলে ‘তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়েই’ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
পিন্টুর আরও বক্তব্য, ওই ‘নোটিফিকেশন’-এ উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মতোই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকতার জন্যও টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (টেট)-এ ন্যূনতম ৬০ শতাংশ পাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যা মানতে নারাজ তাঁরা। পিন্টুর যুক্তি, “সদ্য পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে টেটে বসতে হলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ব।” তিনি জানান, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর নিয়ম অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি, ২০১২-র পর থেকে কোনও বি এড ডিগ্রিধারীর প্রাথমিকে শিক্ষকতার জন্য আবেদন করার কথা নয়। অথচ, ওই ‘নোটিফিকেশন’-এ প্রাথমিকে শিক্ষকতার জন্য পিটিটিআই পাশ করা এবং বি এড ডিগ্রিধারীদের সম গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
পার্শ্ব শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, তাদের দেওয়া ‘প্রতিশ্রুতি’ও রাজ্য সরকার ‘ভঙ্গ’ করেছে। ‘প্যারা টিচার জীবিকা উন্নয়ন কমিটি’র যুগ্ম সম্পাদক অভিজিৎ ভৌমিক বলেন, “রাজ্য সরকার বলেছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় পার্শ্ব শিক্ষকদের ১০% সংরক্ষণ দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে এমএসকে, এসএসকেগুলির শিক্ষক ও পার্শ্ব শিক্ষক মিলিয়ে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা কেবল পার্শ্ব শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষণ চাই। বাকিদের সংরক্ষণ আলাদা ভাবে দেওয়া হোক।” দাবি না মিটলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন তিনিও।
স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন দু’পক্ষের অভিযোগ শুনে বলেন, “প্রত্যেক গোষ্ঠীর জন্য আলাদা ভাবে ১০ শতাংশ করে সংরক্ষণের নির্দেশ নেই। যা নির্দেশ আছে, সেই অনুযায়ীই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে।” |