পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের শুরুর মুখে, রবিবার, মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অজয় দে (৩০) নামে এক যুবকের। পুলিশ বলছে, ওই দিন রাতে ভাইকে নিয়ে অজয় মোটরবাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময়ে কারবেলা রোডে সাইকেল আরোহীর সঙ্গে ধাক্কা লাগলে ঘটনাস্থলেই জখম হন সাইকেল-আরোহী-সহ তিন জন। নিউ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে রাতে সেখানেই মারা যান অজয়।
পুলিশের খাতায় এ তেমন ‘বড়’ ঘটনা না হলেও অজয়ের মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে শহরে যান নিরাপত্তা নিয়ে। পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে ট্র্যাফিক আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে জনবহুল ও ব্যস্ততম এলাকায় মাইকে প্রচার চালানো শুরু হয়েছে। চলছে লিফ্লেট বিলিও। কিন্তু এ সবে সচেতনতার প্রশ্নটা ঢাকা পনে যাচ্ছে না তো? বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া মোড়গুলিতে, বিশেষ করে দুর্ঘটনাপ্রবণ। |
গির্জার মোড়-রানিবাগান-বাসস্ট্যান্ড-পঞ্চাননতলা-চুঁয়াপুর ও কান্দি বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া মোড়ে ট্র্যাফিক পুলিশের নজরদারি বাড়ানো দরকার। এ ছাড়াও স্কুল-কলেজ চলাকালীন মোহনের মোড়, বিদ্যাসাগর মূর্তির মোড় ও কাশীশ্বরী ও কনভেন্ট স্কুলের সামনে জরুরি ভিত্তিতে ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকা উচিত। তবে মোবাইল কানে সাইকেল ও মোটরবাইক চালানো এখন অসম্ভব বেড়ে গিয়েছে। প্রয়োজনে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা দরকার এঁদের।”
যুগাগ্নি নাট্য দলের কর্মী শক্তিনাথ ভট্টাচার্য অবশ্য সমস্ত দায় ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মীদের উপরে না দিয়ে আত্মসমালোচনার ঢংয়ে বলেন, “পঞ্চনানতলা ও চুঁয়াপুর রেলগেটের উপরে উড়ালপুল নেই। সমস্ত জনবহুল ও ব্যস্ততম রাস্তা জবরদখল হয়ে গিয়েছে। রাস্তার উপরে যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে চলাচলের পথ সংকীর্ণ করে রাখি তো আমরাই। পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালনের আগে এ দিকটা নিয়ে বেবে দেখা দরকার।”
বহরমপুর গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ শ্রীলতা চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, “শহরের সমস্ত মোড়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকাটা আবশ্যক। পাশাপাশি ট্র্যাফিক আইন ভাঙেন যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নিলে এসব করার কোনও মানে হয়না।” বহরমপুরের বুক চিরে চলে যাওয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং লাগোয়া মোড়গুলির নিরাপত্তা নিয়েও ‘চাপ’ রয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মীদের উপরে। মুর্শিদাবাদ জেলা ট্র্যাফিক পুলিশ প্রশাসনের তরফে ডিএসপি (ট্র্যাফিক) মহম্মদ আফসারউদ্দিন আহমেদ বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে জাতীয় সড়ক সংস্কার না হওয়ার স্বাভাবিক গতিতে যান চলাচল না করার ফলে যানজট আরও তীব্র হচ্ছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু বাস কৃত্রিম ভাবে যানজট সৃষ্টি করে থাকে।”
পথ নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে শহরের ট্র্যাফিক পুলিশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো দরকার। কেননা, এই মুহূর্তে এক জন ইন্সপেক্টর এবং এক জন ওসি, দু’জন সাব-ইন্সপেক্টর, ২৩ জন এনভিএফ কর্মী, ১২ জন হোমগার্ড এবং দেড়শো জন স্বেচ্ছাশ্রমদানকারী ট্র্যাফিক ওয়ার্ডেন নিয়ে বহরমপুর শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা সামাল দেওয়ার কাজ চলছে। পুলিশ জানায়, কোথাও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে ব্যাঙ্ক-স্কুল-শপিং মল-চায়ের দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার ফলে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে।
এমনই অজস্র প্রশ্নের সামনে নিরাপত্তা সপ্তাহ নিছকই আড়ম্বর কিনা, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই। |