নতুন ইংরেজি বছরের প্রথম সন্ধ্যাতেই মেঘে কালো আকাশ। আর প্রথম রাতেই বেশ কয়েক পশলা বৃষ্টি। সোমবার বছরের প্রথম কাজের দিন কিন্তু তাতে ব্যহত হয়নি। প্রায় সর্বত্রই উপস্থিতির হার ও পরিষেবা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু সব থেকে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছেন পর্যটকেরা। যাঁরা বেড়াতে বেরিয়েছিলেন, তাঁরা এই দিন হোটেলেই থাকতে বাধ্য হন। পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে অনেকের। বেশিরভাগ পর্যটন কেন্দ্রেই হোটেল, অতিথি আবাস ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। তেমনই মার খেয়েছে ব্যবসা।
রবিবার বেলা ১টা নাগাদ জেলা জুড়ে শুরু হয় বৃষ্টি। তারপরে সোমবার দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় কখনও ঝেঁপে কখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে। এলোমেলো ঠান্ডা হাওয়া। তাতেই মুখ ভার ছোট্ট পড়ুয়াদের থেকে শুরু করে অভিভাবকদের।
বহু বছর পরে আবার নতুন বছরে জানুয়ারি থেকেই শুরু হচ্ছে শিক্ষাবর্ষ। সেই কারণেই এই দিন ছিল নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন। সরকারি বেসরকারি যে স্কুল সকালে বসে, তাদেরই সমস্যা ছিল সব থেকে বেশি। |
নতুন ক্লাস, নতুন পাঠ্যসূচি, বুকলিস্ট। সব মিলিয়ে প্রথম দিনটি বাদ দিতে চাননি কেউই। আর তাতেই অকালবর্ষণে সমস্যা তৈরি হয়। দুপুরের স্কুলেও একই অবস্থা। বেশিরভাগ স্কুলেই অবশ্য এই দিন পুরো ক্লাস হয়নি।
বছরের প্রথম দিন সমস্যায় পড়েছেন নিত্যযাত্রীরাও। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়ায় বর্ষশেষের ছুটি কাটিয়ে চাকরি করতে যাওয়ার দুঃখ বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। তবে জেলা বাস মালিক সমিতির সহ সম্পাদক অসীম দত্ত বলেন, “আবহাওয়ার কারণে বাস চলাচলে কোনও বিঘ্ন ঘটেনি। সব রুটে বাস চলেছে। বেলা বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে পথে যাত্রীর সংখ্যাও স্বাভাবিক হয়ে যায়।” নদিয়া জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার চঞ্চল সরকার বলেন, “হাসপাতালের সব বিভাগেই চিকিৎসক ও কর্মীদের হাজিরা ঠিকঠাক। আর পাঁচটা নিদের মতো করেই পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।” কৃষ্ণনগর কালেক্টরিতেও কর্মী-অফিসারদের উপস্থিতির হার প্রায় স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শ্রীকুমার চক্রবর্তী। স্বাভাবিক কাজ হয়েছে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, বিডিও অফিস বা পুরসভাতেও। নবদ্বীপ খেয়াঘাটের জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির কর্তারা জানিয়েছেন, এই দিন নিত্যযাত্রী বা স্থানীয় মানুষ ছাড়া পর্যটক প্রায় ছিল না বললেই চলে। নবদ্বীপের এক খাবারের দোকানের মালিক মধুসূদন বৈষ্ণব বলেন, “গত কয়েকদিনের হিসেবে যত কচুরি, পরোটা তৈরি করেছিলাম, তার কিছুই প্রায় বিক্রি হয়নি। শহরে হঠাৎ করে লোক কমে গিয়েছে।” ভ্যান চালক পল্টন সরকারের কথায়, “এই ক’দিন রোজ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে রোজগার করেছি। এই দিন হয়েছে মাত্র ১৫ টাকা। লোক বের হচ্ছে না বাড়ি থেকে।”
তবে এই বৃষ্টি কৃষির ক্ষেত্রে তেমন কোনও ক্ষতি করবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব্জি বিজ্ঞানের প্রধান আফতাব জামান বলেন, “বৃষ্টি যা হয়েছে, তাতে কোনও ক্ষতি হবে না। তবে মেঘলা হয়ে থাকেল বা কুয়াশা পড়তে থাকলে রোগ পোকার সংক্রমণ বাড়বে।” |