একশো দিনের কাজে গতি আনতে বৈঠক প্রশাসনের
শুধুমাত্র পঞ্চায়েতের অচলাবস্থাই নয়, একশো দিনের প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ‘পিছিয়ে থাকা’র জন্যও দায়ী প্রশাসনের একাংশই। ব্লক প্রশাসনের গড়িমসির জন্যও প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সোমবার জেলা পরিষদ হলে বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে আয়োজিত প্রশাসনিক বৈঠকের সুর ছিল এমনটাই। গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পগুলির অগ্রগতি খতিয়ে দেখতেই এই বৈঠক। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত, জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। একশো দিনের প্রকল্প নিয়েই মূলত আলোচনা হয়। বিডিওদের অজুহাত শুনতে শুনতে ক্লান্ত জেলাশাসক বলেন, “সব সময়ে অস্থিরতার কথা বলবেন না। যে সমস্যা নিজেই মেটাতে পারেন, সেই সমস্যা নিজেই মেটান। প্রতি মাসে গড়ে কত দিন কাজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে, সেই পরিসংখ্যান থাকা উচিত।”
গোটা রাজ্যেই এ বার একশো দিনের প্রকল্পের গতি শ্লথ। গড়ে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র ২৭ দিন। আর পশ্চিম মেদিনীপুরের অবস্থা আরও খারাপ। এখানে গড়ে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে ১৮ দিন! এই পরিসংখ্যানই উদ্বেগ তৈরি করেছে প্রশাসনের অন্দরে। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু কাজ এগোচ্ছে নামমাত্রই। বৈঠকে কার্যত এ কথা খোলাখুলিই বলেন একশো দিনের প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রিয়াঞ্জন দাস। তাঁর বক্তব্য, “গত মাসে যা প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেই মতো কাজ হয়নি।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার ২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একশো দিনের কাজ প্রকল্পের হাল ‘অত্যন্ত’ শোচনীয়। এর মধ্যে ৪টি পঞ্চায়েতে একটি করেও শ্রমদিবস তৈরি হয়নি! অর্থাৎ, এলাকার কোনও মানুষকেই কাজ দেওয়া সম্ভব হয়নি। একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে ‘পিছিয়ে পড়া’ বলে যে ২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত চিহ্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রামের মতো জঙ্গলমহলের এলাকা তো রয়েইছে, পাশাপাশি রয়েছে ডেবরা, মেদিনীপুর সদর, ঘাটালের ব্লকের বেশ কিছু এলাকাও।
‘পিছিয়ে পড়া’ ২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ডেবরার ৪টি পঞ্চায়েত রয়েছে। সোমবারের বৈঠকে তাই ডেবরার বিডিও মালবিকা খাটুয়ার কাছ থেকে জেলাশাসক জানতে চান, “ওই এলাকায় তো কোনও সমস্যা নেই। তারপরও এই পরিস্থিতি কেন?” বিডিও বলেন, “সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে কাঁসাই নদীর জল উঠে গিয়েছিল। তাই সরঞ্জাম পাঠানো যায়নি।’’ সঙ্গে আরও কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন বিডিও। যা শুনে জেলাশাসক জানান, “যে সব সমস্যার কথা বললেন, সেগুলি আপনি নিজেই মেটাতে পারেন। জল তো আগেই নেমে গিয়েছে। তড়িঘড়ি কাজ শুরু করুন। ডেবরার মতো এলাকায় প্রত্যাশিত কাজ হচ্ছে না, এটা মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে।”
একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে সব থেকে পিছিয়ে রয়েছে ঘাটাল ব্লক। এখানে গড়ে ৮ দিন কাজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এর পরেই রয়েছে মেদিনীপুর সদর ও গড়বেতা-১। দু’টো ব্লকেই গড়ে ১০ দিন করে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সাঁকরাইল, বিনপুর-২, দাসপুর-১, গড়বেতা-৩ ব্লকেও মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছেন মাত্র ১১ দিন। গড়বেতা-৩ অর্থাৎ চন্দ্রকোনা রোড এলাকায় ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই প্রকল্পে মাত্র ৪৪ হাজার টাকা খরচ করা গিয়েছে। কেন এই পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিও অমৃতা বর্মন রায়ের কাছে জানতে চান জেলাশাসক। কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে বিডিও বলেন, “এর পরের ১৫ দিনের কাজে অগ্রগতি হয়েছে।” নয়াগ্রামের মতো এলাকায় যেখানে গড়ে ২৪ দিন কাজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে, জামবনির মতো এলাকায় যেখানে গড়ে ২৩ দিন কাজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে, সেখানে ঘাটাল, মেদিনীপুর, ডেবরা, গড়বেতার মতো এলাকা কেন ‘পিছিয়ে’ থাকবে, সোমবারের বৈঠকে সেই প্রশ্নই ঘুরেফিরে এসেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.