|
|
|
|
ডেবরায় ধৃত ৪ |
সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তেজনা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
নতুন বছরের শুরুতেই সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ বাধল পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায়। সোমবারের ওই ঘটনায় দু’পক্ষের ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। সিপিএমের একটি পার্টি অফিসে আগুন লাগানোরও অভিযোগ উঠেছে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে জড়িত অভিযোগে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি জানান, “এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
সংঘর্ষের পরেই তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের অভিযোগ, “গত জানুয়ারিতে নেতাইয়ে নিহতদের স্মরণে আগামী ৭ তারিখে লালগড়ে যে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছেতারই প্রচার-কাজ করছিলেন আমাদের দলের কর্মীরা। চকমানুতে মিটিং করে তাঁরা যখন বাড়ি ফিরছিলেন সে সময়েই হামলা চালায় সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনী। আমাদের ১৮ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।” অন্য দিকে, সিপিএমের ডেবরা জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডলের দাবি, “বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরেই বড়ঝিকুরিয়ার আমাদের পার্টি অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল তৃণমূল। রবিবার দলের কর্মীরা অফিসটি খোলেন। ওই অফিসটি ভেঙে ফেলার জন্য এ দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে যায় তৃণমূল। ভাঙচুর করার সময়ে দলীয় কর্মীরা বাধা দেন। তাঁদের মারধর করে তৃণমূলের লোকজন। আমাদের ২৪ জন কর্মী আহত হয়েছেন।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বড়ঝিকুরিয়া গ্রামটি এক সময়ে সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি ছিল। এলাকাটি কেশপুর-লাগোয়া। বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরে সিপিএমের কর্মসূচি স্তিমিত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি জোনাল সম্মেলনের পরে এলাকায় ফের দলীয় কর্মসূচি শুরু করেছে সিপিএম। দলীয় পতাকা উত্তোলন করে রবিবার বড়ঝিকুরিয়ার শাখা অফিসটি খোলেন সিপিএম কর্মীরা। সিপিএমের অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে জড়ো করে সোমবার সকালে বড়ঝিকুরিয়ায় মিছিল করে তৃণমূল। সিপিএম অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। তখনই লাঠি, বাঁশ, টাঙ্গি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তৃণমূলের ১৮ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত আনোয়ার আলি, কওসর মহম্মদ, সেরাজুল রহমান-সহ ৭ জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সিপিএম সমর্থক বনমালী চৌধুরীকেও গুরুতর আহত অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ডেবরার বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। বড়ঝিকুরিয়া থেকে কিছুটা দূরে মাড়তলা। মাড়তলাতেও সিপিএমের পার্টি অফিসে আগুন লাগানো হয়। কয়েকটি এলাকায় বাড়ি ভাঙচুরেরও ঘটনা ঘটে। প্রথমে খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীরাজ খালেদ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ মুখোপাধ্যায়কেও পাঠানো হয়। সন্ধের পরে পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি নিজেও ডেবরা যান।
রাজ্যে পালাবদলের পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় একাধিক সংঘর্ষের ঘটেছে। তবে তার প্রায় সবই ঘটেছে তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে বা জোটসঙ্গী কংগ্রেসের সঙ্গে। সিপিএমের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের ঘটনা তেমন ঘটেনি। ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতির আবার বক্তব্য, “মূলত, খরা-ত্রাণের চাল বিলিকে কেন্দ্র করে রবিবার থেকে এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। গ্রাম পঞ্চায়েত এখনও সিপিএমেরই দখলে। সিপিএম নিজেদের লোকজনকেই কেবল চাল দিচ্ছিল। তার প্রতিবাদ করাতেই হামলা চালায় সিপিএম। পুলিশকে জানিয়েছি, দোষীদের গ্রেফতার করে অবিলম্বে ডেবরায় শান্তি ফেরাতে হবে।” |
|
|
|
|
|