সম্মেলনের মুখে কাঁটা সেই নন্দীগ্রাম
চার বছর আগের মতোই এ বারও সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন ঘিরে সেই ‘নন্দীগ্রাম’।
২০০৭-এ শেষ বারের জেলা সম্মেলনের ঠিক মুখেই ‘অপারেশন সূর্যোদয়ে’ নন্দীগ্রাম পুনর্দখল করেছিল সিপিএম। হারানো রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধার করা গিয়েছেএই ধারণায় সে বার জেলার সিপিএম নেতারা ছিলেন ‘যুদ্ধজয়ী’র মেজাজে। সে ধারণা মিথ্যে প্রমাণ হতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে নন্দীগ্রামে তো বটেই, নন্দীগ্রাম-হাওয়ায় গোটা জেলাতেই চরম বিপর্যস্ত হয় সিপিএম। পরের লোকসভা, বিধানসভা ভোটেও ফের পর্যুদস্ত হয়েছে তারা। বিধানসভা ভোটে রাজ্যপাট থেকেই উৎখাত হতে হয়েছে। আর সেই পরিবর্তনেও অন্যতম ‘ফ্যাক্টর’ হয়েছে ‘নন্দীগ্রাম’।
ক্ষমতা খোওয়ানো অবস্থায় সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে এমনিতেই রাজ্য জুড়ে সমস্যায় সিপিএম নেতৃত্ব। আর পূর্ব মেদিনীপুরে চার বছর আগের সেই ‘নন্দীগ্রামে সূর্যোদয়’ই বাড়তি অস্বস্তি তৈরি করছে। ২০০৭-এর নভেম্বরের সেই ‘পুনদর্খল অভিযানে’র সময়ে সিপিএমের হামলায় ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির বেশ কয়েক জন আহত-নিহত ও নিখোঁজ হন। ৯ জনের খোঁজ আজও মেলেনি। অভিযোগ, তাঁদের খুন করে দেহগুলি খেজুরির কাছে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে নিয়ে বাম আমলে তদন্ত এগোয়নি। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে নিখোঁজদের পরিজনেরা দ্বারস্থ হন হাইকোর্টের। পুলিশের এত দিনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তদন্তভার সিআইডিকে দেয় হাইকোর্ট। সিআইডি তদন্ত শুরু হতেই অস্বস্তি বেড়েছে সিপিএম নেতাদের।
নন্দীগ্রাম-খেজুরি মিলিয়ে ইতিমধ্যেই ৭ সিপিএম নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সোনাচূড়ার সেই নব সামন্তও, সিপিএমের নন্দীগ্রাম-অভিযানে যাঁর ভূমিকা ছিল বিশেষ ‘গুরুত্বপূর্ণ’। নাম জড়িয়েছে হিমাংশু দাস, রবিউল হোসেন, বিজন রায়-সহ জোনাল ও জেলা পর্যায়ের বেশ কয়েক জন সিপিএম নেতার। যাঁদের খোঁজে তল্লাশিও চালাচ্ছে সিআইডি। যার জেরে আত্মগোপন করেছেন ওই সিপিএম নেতারা। প্রসঙ্গত, হলদিয়ায় আত্মগোপন করে থাকা অবস্থাতেই ধরা পড়েন নব সামন্ত। সম্মেলনের আগে তাই অস্বস্তি বাড়ছে সিপিএম-শিবিরে।
‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’তে জেলার অনেকগুলি লোকাল ও জোনাল কমিটির সম্মেলনই হয়েছে নমো নমো করে। আর আগামী ৬ থেকে ৮ জানুয়ারি হতে চলেছে জেলা সম্মেলন। সম্মেলন হবে তমলুকে দলের জেলা কার্যালয়েই। ৬ তারিখ প্রকাশ্য সমাবেশ হবে নিমতৌড়িতে জাতীয় সড়ক-সংলগ্ন মাঠে। উপস্থিত থাকার কথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুরও। কিন্তু সম্মেলন ও প্রকাশ্য সমাবেশে জেলার কয়েক জন প্রথম সারির নেতার উপস্থিতি নিয়েই তৈরি হয়েছে সংশয়।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাংগঠনিক শক্তি-হ্রাসের প্রেক্ষিতে জেলায় সিপিএমের লোকাল কমিটির সংখ্যা ইতিমধ্যেই ১৬০ থেকে কমে ১৩৯ এবং জোনাল কমিটি সংখ্যা ২৬ থেকে কমে ২৩ করা হয়েছে। তিনটি জোনাল কমিটির সম্পাদক বদল হয়েছে। নন্দীগ্রাম, চণ্ডীপুর ও ভগবানপুরে নতুন সম্পাদক হয়েছেন যথাক্রমে রবিন মাইতি, মঙ্গলেন্দু প্রধান ও সত্যরঞ্জন দাস। জেলা সম্মেলনেও জেলা কমিটির আয়তন-হ্রাসের সম্ভাবনা। এত দিন জেলা কমিটি ছিল ৭২ জনের। তবে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে লক্ষ্মণ শেঠের অনুগামীদের সংখ্যাই বেশি হওয়ায় ওই শিবিরের কানু সাহুরই জেলা সম্পাদক পদে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা। যদিও লক্ষ্মণ-বিরোধীরা একদা এই ‘হলদিয়াপতি’র ক্ষমতা খর্ব করতে সম্মেলনের আগে সক্রিয় হচ্ছেন বলেও দলীয় সূত্রের খবর। নন্দীগ্রাম-কাণ্ড তো বটেই, সম্প্রতি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ-বিতর্কেও লক্ষ্মণবাবুর ‘কাজ’ দলীয় নেতৃত্বকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে বলে সিপিএম-শিবিরেই গুঞ্জন চলছে। আর নন্দীগ্রাম-কাঁটা ফিরে ফিরেই বিঁধছে সিপিএম নেতাদের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.