ইস্টবেঙ্গল-২ (পেন-২)
এয়ার ইন্ডিয়া-১ (হেনরি) |
দিয়েগো মারাদোনা যে দিন যুবভারতীতে এসেছিলেন, সে দিন গ্যালারিতে ছিলেন না পেন ওরজি।
সোমবার বিকেলে ম্যাচের সেরার পুরস্কারটা নেওয়ার সময় পেনকে কিন্তু দেখা গেল ফুটবল রাজপুত্রকে অনুকরণ করতে। বুক চাপড়ে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিকে যেন বোঝাতে চাইলেন, ‘আমি আছি, দলের দুঃসময়ে আমিও জেতাতে পারি।’
ছোট্টখাট্টো নাইজিরিয়ানকে ফোন করলে তাঁর কলার টিউনে যে গান বাজে তার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় “কাল যে দিন গেছে যাক, নতুন যে সূর্য উঠেছে তার আলো যেন ঈশ্বর আমার উপর বর্ষণ করেন।” যিশু-ভক্ত সেই পেনের আলোতেই নতুন বছরের শুরুতে অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরল মর্গ্যানের টিম। যা একসঙ্গে দু’টো আশীর্বাদ নিয়ে এল লাল-হলুদে। চার গোলে হারের কালো চাদর সরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আই লিগ প্রথম পর্বের শেষে তাদেরকে চ্যাম্পিয়নশিপের সোনালি রেখাও দেখাল। |
মাঠ ছাড়ছেন নায়ক পেন। সোমবার। ছবি: উৎপল সরকার |
পেনের জোড়া গোলের মধ্যে কোনটা বেশি মহার্ঘ তা নিয়ে ম্যাচ শেষে জোর বিতর্ক। কারণ, রবিন-টোলগেদের একের পর এক সহজ সুযোগ নষ্টে ইস্টবেঙ্গল যখন ঘরের মাঠে দিশাহারা, তখন যেন অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হলেন পেন। এয়ার ইন্ডিয়া-র প্রবাসী বঙ্গসন্তান ডিফেন্ডার প্রতীক চৌধুরীর সামান্য ভুলকে কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে দেওয়া পেনের। আর পরের গোলটা তো টিমের রীতিমতো দুঃসময়ে। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ভুলে ততক্ষণে ১-১ করে দিয়েছেন বিরতিতে নামা মুম্বইয়ের অফিস ক্লাবের স্ট্রাইকার এজে হেনরি। মাঝমাঠে ক্রমশ মুঠি আলগা হচ্ছে সঞ্জু-সুশান্ত-খাবড়াদের। বিপজ্জনক হয়ে উঠছেন বিমানকর্মীরা। ঠিক তখনই প্রায় একার কৃতিত্বে বিপক্ষের পায়ের জঙ্গলের মধ্যেই ইস্টবেঙ্গলের জয়ের ঠিকানা লিখলেন পেন। মিডফিল্ডার পেনের খেলা দেখে মোহন সিংহের কথা মনে পড়ছিল সমরেশ চৌধুরীর। বললেন, “এই পেন ছেলেটার সঙ্গে মোহনের খেলার অদ্ভুত মিল। খুব ভাল পজিশন নেয়। বল পায়ে পড়লেই প্রচণ্ড গতিতে ড্রিবল করে। দুটো উইংহাফেই খেলতে পারে।”
এয়ার ইন্ডিয়া বরাবরের গাঁট ইস্টবেঙ্গলের। এক বার গোল শোধ করেও সন্তোষ কাশপ্যের টিম সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি। গত সপ্তাহেই মোহনবাগানের বিরুদ্ধে যা খেলেছিল তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে। ডেম্পো-স্পোর্টিং ক্লুবকে হারানোর পরেও ‘অবনমন বাঁচানো’ই যে দলের কোচের কাছে ‘সাফল্য’, তাদের কাছে অবশ্য ভাল কিছু আশা করাও বৃথা। বিপক্ষের এই মনোভাবই সুবিধা করে দিয়েছিল টোলগেদের। শুরু থেকেই পেনের নেতৃত্বে মাঝমাঠের দখল নিয়েছিল মর্গ্যান ব্রিগেড। পনেরো মিনিটের মধ্যেই রবিন একাই ২-০ করে দিতে পারতেন। নয়ডার সুদর্শন স্ট্রাইকার তা তো করলেনই না, উল্টে চোট পেয়ে মাসখানেকের জন্য চলে গেলেন মাঠের বাইরে। জিতলেও ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের হাল কিন্তু খারাপ। হেনরি নামার পর তা আরও প্রকাশ্যে চলে এল। মর্গ্যান অবশ্য ‘খারাপ’ শব্দটা শুনতেই নারাজ। আপাতত লিগ টেবিলের তিন নম্বরে উঠে রাতের ঘুম নষ্ট করতে তিনি নারাজ!
|
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, সৈকত (পাইতে), ওপারা, নির্মল, সৌমিক, সঞ্জু (ভাসুম), পেন, খাবড়া, সুশান্ত, টোলগে, রবিন (বলজিৎ)। |
মঙ্গলবারে
আই লিগ ফুটবল
মোহনবাগান: পুণে এফসি (পুণে, ৬-৩০)
ডেম্পো: প্রয়াগ ইউনাইটেড (মারগাও)। |