এখানে নতুন বছর একটা বিরাট উৎসবের ব্যাপার, পরিবার পরিজন সবাই একত্রিত হয়। ক্রিকেটারদের পক্ষে পরপর বক্সিং ডে টেস্ট আর নিউ ইয়ার্স টেস্ট খেলাটা খুব চাপের হয়ে যায়। টেস্টে অনেকরকম প্রস্তুতির ব্যাপার থাকে, বিশেষ করে মানসিক প্রস্তুতি। আপনি হয়তো নতুন বছরের প্রথম দিন পরিবারের সঙ্গে আছেন, কিন্তু উৎসব থেকে অনেক দূরে মন পড়ে আছে টেস্ট নিয়ে ভাবনাচিন্তায়। আর যদি আগের টেস্টটা খারাপ যায়, তা হলে তো মন পুরোপুরি উৎসব থেকে অনেক দূরে থাকবে।
নতুন বছরের প্রথম দিন সিডনি পৌঁছে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এসসিজি-তে চলে গিয়েছিলাম ভারতীয়দের ট্রেনিং দেখতে। বেশির ভাগ টেস্টই মানসিক ভাবে খেলা হয় এবং নেটে আমাদের টিমের একাত্মতা দেখে মন খুশি হয়ে উঠছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় শেষ সফরে পিছিয়ে থেকেও ওরা দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রায় সিরিজ জিতে যাচ্ছিল। আশা করা যাক, ডানকান ফ্লেচার আর ধোনি টিমকে সেই সফরের কথা মনে করিয়ে দেবে। টিমের মিটিংয়ে সেই সফরের কথা উঠলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে।
এসসিজি-তে সাধারণত বেশ ভাল ব্যাটিং উইকেট হয়। প্রথম দিন পিচ কেমন আচরণ করে দেখতে মুখিয়ে আছি। সিডনিতে এখন বেশ গরম, আর্দ্রতাও আছে। গ্রাউন্ডসম্যানরা উইকেট পাঁচ দিন অক্ষত রাখার জন্য যদি পিচে সামান্য ভেজা ভাব রেখে দেয়, আমি অন্তত অবাক হব না।
ভারত কোনও বদল করবে বলে মনে হয় না। ধোনি সব সময় ক্রিকেটারদের পাশে থেকেছে এবং এ ক্ষেত্রেও থাকবে। সেরা টিমই এমসিজিতে নামানো হয়েছিল এবং একটা টেস্ট দিয়ে কোনও কিছু বিচার হয় না। গম্ভীরের ফর্ম নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আমি মানি না। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টেস্টের পরে ও দারুণ ভাবে ফিরে এসেছিল এবং এখানেও সফল হওয়ার মতো টেকনিক্যাল ও মানসিক দক্ষতা ওর আছে। দুশ্চিন্তা বলতে বিরাট কোহলি। সিনিয়র সদস্যদের ওকে সাহায্য করা উচিত। ধোনির হাতেই এই টেস্টের চাবিকাঠি এবং আমি চাই ভারত আগে ব্যাট করুক। এমসিজিতে উইকেটের পিছনে দুর্দান্ত ছিল ধোনি, এখানে ব্যাট হাতেও কিছু করে দেখাবে আশা করছি। টিমকে বার করার জন্য ধোনিকেই অনুঘটক হতে হবে।
|
ধোনিকে তেতে থাকতে হবে
স্টিভ ওয় |
আমি এমন লোক নই যে চূড়ান্ত আত্মতৃপ্ত হয়ে বলব, ‘কী বলেছিলাম?’ কিন্তু ঘটনা তো, আমি এরকমই বলেছিলাম। বলেছিলাম, বোলাররা প্রথম টেস্টে রাজত্ব করবে। করেছে। বলেছিলাম, দু’দলের বোলিংয়েরই ক্ষমতা আছে বিপক্ষের কুড়িটা উইকেট তোলার। ওরা তুলেছে। বলেছিলাম, প্যাটিনসনের বাড়তি গতি সামলানো মুশকিল হতে পারে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের। সেটাও হল।
সিডনিতে তবু ভারতের সুবিধা হল, নতুন বছরে ওরা একদম নতুন করে সব শুরু করতে পারবে। মেলবোর্নে ওদের সামনে সুযোগ আসেনি এমন নয়। কিন্তু সে সময় ওদের অত্যন্ত সাদামাটা দেখিয়েছে। সুযোগ নিতে গেলে যে তৎপরতাটা দরকার হয়, সেটা পাওয়া যায়নি ভারতীয়দের থেকে। ফিল্ডিংয়ে ফাঁকফোঁকর ছিল। ধোনির মধ্যেও সেই তেতে থাকা ভাবটা দেখলাম না। আমি যদি ধোনি হতাম, তা হলে কিন্তু চিন্তায় থাকতাম। ‘মুভিং’ বলের সামনে ভারতীয়দের অনিশ্চয়তা রয়েই গেল। অবশ্যই সচিনকে বাদ দিয়ে কথাটা বলছি। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মাঠেও কিন্তু ঘাস থাকবে। ভারতীয় শিবির নিশ্চয়ই খুশি হবে না। ওরা মানছে অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জেতার এটাই ওদের সেরা সুযোগ। স্বপ্নটা যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয় তা হলে সিডনিতে আরও ইতিবাচক হয়ে নামা ছাড়া অন্য উপায় নেই। |