|
|
|
|
অসিযুদ্ধ |
সিডনির সর্বকালের সেরা দলে ভারত থেকে সচিন, লক্ষ্মণ আর কুম্বলে |
গৌতম ভট্টাচার্য • সিডনি |
সর্বকালের সেরা দল নির্বাচন মানেই কি তার মধ্যে বিতর্কিত কিছু থাকবে? সে ইন্টারনেটে আইসিসি টিম হোক। ব্র্যাডম্যানের মৃত্যু-পরবর্তী ঘোষিত দল হোক। বা সিডনি মাঠের সর্বকালের সেরা একাদশ।
সিডনি মাঠ দেখাশোনার দায়িত্বভার যাদের হাতে সেই সিডনি ক্রিকেট অ্যান্ড গ্রাউন্ড ট্রাস্ট সোমবার যে সর্বকালের সেরা অস্ট্রেলীয় এবং বিশ্ব একাদশ দলের নাম ঘোষণা করেছে, তাতে বিতর্ক অবশ্যম্ভাবী। এ দিনই তো অন্যতম এক নির্বাচক বললেন, কয়েকটা নাম নিয়ে তাঁদের কারও কারও “অপরিবর্তনযোগ্য বক্তব্য” রয়েছে। যেমন মেনে নিতে পারছেন না যে, ডেনিস লিলিকে তাঁরা বাদ দিয়েছেন।
এই নির্বাচন বিশ্বনিরিখে তো নিশ্চয়ই, কিন্তু তার চেয়েও বেশি করে সিডনি মাঠের পারফরম্যান্সভিত্তিক। এখানেই প্রশ্ন উঠছে নির্বাচকদের মনেও। সিডনি মাঠের ৮ টেস্টে রে লিন্ডওয়াল নিয়েছেন ৪২ উইকেট। লিলি সমসংখ্যক টেস্টে ৪৩ উইকেট। তা হলে তিনি বাদ যান কী করে? আজ পর্যন্ত কখনও কোনও বিশ্বপর্যায়ের দল বা অস্ট্রেলিয়া টিমে ডেনিস লিলি বাদ যাননি। লিলির সেরা সময়ের প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বীও বাদ ভিভ রিচার্ডস!
বাদ গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া দল থেকে অ্যালান বর্ডারও। যিনি আবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া-র গড়া দেশের সর্বকালের সেরা দলে জায়গা পেয়েছিলেন। সিডনি মাঠে এত সব অমর ইনিংস আছে স্টিভন রজার ওয়-র। মেম্বার্স প্যাভিলিয়নের কোনায় গত বছর বসেছে তাঁর ব্রোঞ্জ মূর্তিও। অথচ স্টিভও দলে নেই।
|
|
সিডনির শততম টেস্টে যে টুপি ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের দেওয়া হবে। |
ওপেনিংয়ে ম্যাথু হেডেন বাদ গিয়ে ডেভিড বুন। সিডনি মাঠে বুনের রান তুলনায় সামান্য বেশি। আর ভিক্টর ট্রাম্পার ক্রিকেট রোম্যান্টিসিজমের দুর্বার নায়ক হিসেবে অগ্রাধিকার পেয়েছেন সিম্পসন বা আর্থার মরিসের চেয়ে। মরিস আবার ব্র্যাডম্যানের বাছা সর্বকালের সেরা বিশ্ব একাদশে ওপেনার হিসেবে আছেন!
ভারত থেকে তিন জন জায়গা পেয়েছেন অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশে। যে টিমে জায়গা হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বখ্যাত এক জন পেসারেরও। এমনকী ভিভ রিচার্ডসেরও না। সিডনি মাঠে ভিভের চেয়ে রান এবং গড় দু’টোতেই আসলে এগিয়ে ভিভিএস লক্ষ্মণ। তিনে তাই লক্ষ্মণ। চার নম্বরে তেন্ডুলকর। আর বোলিং বিভাগে অপ্রত্যাশিত ভাবে মুরলীকে হারিয়ে অনিল কুম্বলে। নির্বাচকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছিলেন, “সিডনিতে কুম্বলের মতো ভাল পারফরম্যান্স সফররত কোনও দেশের স্পিনারের নেই।”
নির্বাচক প্যানেলে ছিলেন চার সাংবাদিক এবং সিডনি গ্রাউন্ড ট্রাস্টের সর্বময় কর্তা রডনি ক্যাভেলিয়র। নির্বাচনী গাইডলাইন ছিল, অতীতকেও যথাসম্ভব রাখতে হবে। কারণ মাঠের ইতিহাস ১২৯ বছরের। এই বছরগুলোয় যে ৯৯ টেস্ট হয়েছে তার কেবল আধুনিক সময়ের ম্যাচগুলো নিলে হবে না। সামগ্রিক হিসেব নিতে হবে। সেই মতো সুযোগ পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অখ্যাত বোলার চার্লি টার্নার। তাঁর প্রথম টেস্ট ১৮৮৭-তে। এসসিজি-তে। খেলা ছাড়েন ১৮৯৫-তে। কিন্তু ওই সময়কার আনকভার্ড উইকেটে বল করে সিডনিতে ৬ টেস্টে নেন ৪৫ উইকেট। গড় ১৩। বিশ্ব একাদশে জর্জ লোম্যান নিয়েও প্রশ্ন। কারণ, তিনি সিডনিতে ৪ টেস্টে ৩৫ উইকেট নিলেও তত খ্যাতনামা নন। তার চেয়েও আশ্চর্যের মাত্র ৯ গড় দিয়ে উইকেটগুলো পেয়েছিলেন।
|
সিডনি মাঠের নির্বাচিত সর্বকালের সেরা একাদশ |
অস্ট্রেলিয়া: ভিক্টর ট্রাম্পার, ডেভিড বুন, ডন ব্র্যাডম্যান, রিকি পন্টিং, গ্রেগ চ্যাপেল, কিথ মিলার, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শেন ওয়ার্ন, রে লিন্ডওয়াল, চার্লি টার্নার, গ্লেন ম্যাকগ্রা।
দ্বাদশ ব্যক্তি: ফ্রেড স্পফোর্থ।
কোচ: রিচি বেনো। |
|
অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশ: হার্বার্ট সাটক্লিফ, জ্যাক হবস,
ভিভিএস লক্ষ্মণ, সচিন তেন্ডুলকর, ওয়ালি হ্যামন্ড,
গারফিল্ড সোবার্স, রিচার্ড হ্যাডলি, অ্যালান নট, অনিল কুম্বলে, জর্জ লোম্যান, সিডনি বার্নস।
দ্বাদশ ব্যক্তি: হ্যারল্ড লারউড।
কোচ: ডব্লিউ জি গ্রেস। |
|
হ্যারল্ড লারউড কেন দ্বাদশ ব্যক্তি হবেন? কেন মূল দলে সুযোগ পাবেন না তা নিয়েও শোনা গেল নির্বাচনী বৈঠকে উত্তেজিত বাক্যবিনিময় হয়েছে। সিডনি মাঠেই লারউডের তিন ম্যাচে ১৯ উইকেট। গড় ২৩.৬৩। কিন্তু ইংরেজ মিডিয়াম পেসার সিডনি বার্নসের আরও ভাল বোলিং হিসেব। ৫ টেস্টে ২৮ উইকেট। গড় ২৭। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বখ্যাত চার বোলারের কেউ নেই কেন দলে? উত্তরে দুই নির্বাচক জানালেন, চার ফাস্ট বোলারের সেরা সময়ে সিডনি পিচ এত ঢ্যাবঢ্যাবে আর স্পিনারধর্মী ছিল যে, তাঁদের পারফরম্যান্স এখানে দুর্দান্ত কিছু নয়। মাইকেল হোল্ডিং তাঁদের মধ্যে এগিয়ে। ৩ টেস্টে ১৪ উইকেট। গড় ২৩। কিন্তু সারা পৃথিবীর পেসারদের মধ্যে তিনি ৩০ নম্বরে। তাই নেওয়া যায়নি।
১৮৮২-২০১১ এই ছিল নির্দিষ্ট সময়সীমা। বলা হয়েছিল বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন যুগের প্রতিনিধিত্ব করে এই ভাবে যেন দল বাছা হয়। টেস্টের আগে আগে মনে হচ্ছে নির্বাচকেরা ব্র্যাডম্যানের মৃত্যু-পরবর্তী ধিকৃত দলের মতোই কিছু করে উঠবেন না তো?
হোক না একশো আঠাশ বছরের ইতিহাস। বোথাম নেই। লিলি নেই। ভিভ নেই! এই মাঠে ২৭৭ করেও লারা নেই! ক্রিকেটমোদী মানবে তো? সরকারি ভাবে ঘোষিত দল যতই হোক! তার কি স্মৃতির ওপর অত্যাচার করার পারমিট থাকে? |
|
|
|
|
|