নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ক্রমান্বয়ে হাতির হানায় অতিষ্ঠ গ্রামবাসীরা ক্ষোভ উগড়ে দিলেন বন দফতরের উপরে। সোমবার সকালে হামলার ঘটনা ঘটল গড়বেতার ধাদিকা বিট অফিসে। ভাঙচুর করা হল অফিস, বনবাংলো। সামনে পড়ে থাকা কাঠে আগুন লাগানো হল। গ্রামবাসীরা তুলে নিয়ে যান তিন কর্মীকেও। পরে পুলিশ অবশ্য ওই তিন বনকর্মীকে উদ্ধার করেছে। হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করাও করেছে।
পুলিশ ও বন দফতর সূত্রের বক্তব্য, সোমবার সকালে ধবনী, মুনুনিয়া-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েকশো মানুষ বিট অফিসে হাজির হন। হাতির দল বার বার কেন আসছে, তার কৈফিয়ৎ চান। অবিলম্বে হাতির দলকে দলমায় তাড়ানোর দাবিও জানান। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি ওঠে। বনকর্মীরা তাঁদের সাধ্যমতো জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা বোঝাবুঝির রাস্তায় না গিয়ে বিট অফিস, বনবাংলো, বনকর্মীদের আবাসনে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহার দাবি, “সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। বাড়ি, বাংলো, আবাসন ভাঙচুরের পাশাপাশি জলের লাইনও নষ্ট করা হয়েছে। সাবমার্সিবল পাম্প ভেঙে দেওয়া হয়েছে।” পরে বিশাল বাহিনী নিয়ে এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন গড়বেতার ওসি শৈলেন বিশ্বাস। ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। |
ভাঙতুরের পরে ধাদিকা বিট অফিস। নিজস্ব চিত্র |
বেশ কিছু দিন ধরেই দলমা থেকে আসা হাতির দল পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এত দিন মাঠে ধান ছিল, সেই ধান খেয়ে সাবাড় করেছে। এখন ধান তুলে খামারে রেখেছেন কৃষকেরা। মাঠে রয়েছে আলু ও সব্জি। প্রতি দিন সন্ধের পর হাতির দল জঙ্গল থেকে মাঠে নেমে পড়ছে খাবারের সন্ধানে। মাঠের আলু-সব্জি খেয়ে-মাড়িয়ে নষ্ট করার পাশাপাশি ধানের খোঁজে গ্রামের খামারেও হানা দিচ্ছে। বাড়িঘরও ভাঙছে। একেই চাষের খরচ বেড়েছে, অথচ আলু-ধানের দাম মিলছে না। কৃষিজীবী মানুষ এমনিতেই হতাশ। তার উপরে হাতির উপদ্রবে তাঁরা অতিষ্ঠ। বন দফতর হাতি তাড়াতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করছে না বলে তাঁদের অভিযোগ। সেই অসন্তোষ থেকেই তাঁরা এ দিন ‘জবাবদিহি’ চাইতে গিয়েছিলেন ধাদিকা বিট অফিসে। এই মুর্হূতে শ’খানেক হাতির একটি পাল রয়েছে ধাদিকা লাগোয়া কুচলিবাড়ের জঙ্গলে। প্রতি দিনই ক্ষয়ক্ষতি চালাচ্ছে সংলগ্ন গ্রামগুলিতে।
কিন্তু হামলা চালালেই কি সমস্যা মিটবে? ডিএফও বলেন, “আমরা যে প্রতি দিনই অভিযান চালাচ্ছি, হাতিকে দলমায় পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি, তা এলাকার মানুষও জানেন। তাঁরাও এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করছেন। প্রতি বছরই হাতি আসে, কিছু ফসল নষ্ট হয়, তা-ও ওই এলাকার মানুষ জানেন। কিন্তু কোনও দিন এ ভাবে বিট অফিসে হামলা হয়নি। এ বার মানুষ কেন এত উত্তেজিত হয়ে পড়লেন, বুঝতে পারছি না।” ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে বন দফতর বৈঠক করবে বলেও জানিয়েছেন ডিএফও। |