কালীঘাট মন্দিরের বেহাল অবস্থা নিজেদের চোখে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অন্য এক বিচারপতি। তাঁরা দু’জনেই রবিবার, ইংরেজি বছরের প্রথম দিনে, আলাদা ভাবে ওই মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল মন্দির দর্শনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সোমবার প্রকাশ্য আদালতে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ভর্ৎসনা করেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে। আর বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় কালীঘাট মন্দিরের প্রবেশপথের অবস্থা দেখে সেই সময়ে ঘটনাস্থলেই ডেকে পাঠান কালীঘাট থানার ওসি-কে।
এত দিন কালীঘাট মন্দির নিয়ে জনস্বার্থের মামলার শুনানির সময়ে সেখানকার দুরবস্থার কথা অনেক শুনেছেন প্রধান বিচারপতি। বাস্তব অবস্থা রবিবার নিজে মন্দির দর্শনে গিয়ে প্রত্যক্ষ করেন তিনি। মন্দিরের ধারে আদি গঙ্গার হাল এবং মন্দির সংলগ্ন এলাকার অপরিচ্ছন্নতা দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হন। আহত হন মন্দির দর্শনে আসা ভক্তদের দুরবস্থা দেখেও।
সোমবার হাইকোর্টের কাজ শুরু হওয়ার পরেই প্রধান বিচারপতি দেখতে পান, তাঁর এজলাসে উপস্থিত রয়েছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আইনজীবী নয়নচাঁদ বিয়ানি। তখন স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই কালীঘাট মন্দিরের পাশে বয়ে চলা আদি গঙ্গার দূষণ ও মন্দির সংলগ্ন এলাকার দূষণ নিয়ন্ত্রণে পর্ষদের কী ভূমিকা, তাঁর কাছে তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “কলকাতা একটি পুরনো শহর। কালীঘাটের মন্দির অনেক প্রাচীন। দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত সেখানে দর্শনে আসেন। সেই জায়গারই এমন বেহাল অবস্থা! আদি গঙ্গার এই নর্দমার মতো চেহারা দেখেও পর্ষদ যে নীরব বসে আছে, তা ভাবা যায় না।” আগামী শুক্রবার ফের কালীঘাট মন্দির নিয়ে জনস্বার্থের মামলার শুনানি হবে। সে দিন পর্ষদকে জানাতে হবে, তারা কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কি না। যদি নিয়ে থাকে তবে জানাতে হবে, তার পরেও মন্দিরের এমন দুরবস্থা হয় কী করে।
রবিবারই সন্ধ্যায় ওই মন্দিরে যান অপর বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়। ভিআইপি গেটে অব্যবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ হন তিনি। বিচারপতি দেখেন, ভিআইপি-দের নিরাপত্তার স্বার্থে এই বিশেষ প্রবেশপথ দিয়ে পুলিশের চোখের সামনেই অবাধে যাতায়াত করছেন সাধারণ মানুষ। কেন পুলিশ কোনও কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে না, কালীঘাট থানার ওসি-কে ডেকে সে কথা জানতে চান বিচারপতি। ওই পথে যেন শুধু ভিআইপি-দের প্রবেশাধিকার থাকে, তা নিশ্চিত করতেও ওসি-কে নির্দেশ দেন তিনি। এর পরে পুলিশ ভিআইপি গেট দিয়ে অকাতরে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু রাতে এই নির্দেশ নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সেবায়েতরা। তাঁদের বক্তব্য, বিধিতে লেখা আছে যে, সেবায়েত ও তাঁদের যজমানেরাও ভিআইপি গেট দিয়ে ঢুকতে পারবেন। |