আবহাওয়া এবং পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের প্রভাব সুন্দরবনের গাছগাছালি ও বন্যপ্রাণীর উপরে কতটা পড়ছে, এ বার তা নিয়ে বিশেষ সমীক্ষায় হাত দিচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ সংক্রান্ত সংস্থা আইপিসিসি (ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ)। সোমবার কলকাতায় এসে এ কথাই জানিয়ে গেলেন আইপিসিসি-র চেয়ারম্যান, নোবেলজয়ী পরিবেশবিদ রাজেন্দ্রকুমার পচৌরি।
মাতলা, বিদ্যাধরীর মতো বিভিন্ন নদী সুন্দরবনে আগের মতো মিষ্টি জলের জোগান দিতে পারছে না। ফলে বিভিন্ন ধরনের ম্যানগ্রোভের আকৃতি ছোট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা হারাচ্ছে তারা। সুন্দরবনের উদ্ভিদ এবং প্রাণিবৈচিত্রের পথে তা বাধার সৃষ্টি করছে বলে সমীক্ষায় ধরা পড়েছে।
 |
রাজেন্দ্র পচৌরি |
এর সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়নের কুপ্রভাবও সুন্দরবনের উপরে পড়ছে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। তাঁরা বলছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ায় ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা বাড়ছে। বেড়ে যাচ্ছে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতাও। এর ফলে নোনা জল ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে সুন্দরবনের বনভূমিকে। এই অবস্থা থেকে বদ্বীপকে কী ভাবে রক্ষা করা সম্ভব, তা নিয়েই সবিস্তার সমীক্ষায় নামতে চলেছে আইপিসিসি। পচৌরি জানান, পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবন-সহ উপকূল এলাকা এবং দার্জিলিঙে আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে প্রচুর কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন পচৌরি। তিনি জানান, আবহাওয়া পরিবর্তন সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণার কাজে বারুইপুরে চার একর জমিতে তাঁর পরিচালিত প্রতিষ্ঠান এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট কাজ শুরু করতে চলেছে। ওই প্রতিষ্ঠানে ‘লাইটিং এ বিলিয়ন ল্যাম্পস’ প্রকল্পে প্রতিটি গ্রাম থেকে এক জন মহিলাকে এনে কেরোসিন লন্ঠনের বদলে সৌরলন্ঠন ব্যবহারের পদ্ধতি শেখানো হবে। গ্রামে গ্রামে সৌরলন্ঠন ছড়িয়ে দেওয়া হবে তাঁদের মাধ্যমেই। পচৌরি বলেন, “গ্রামে মহিলা ও শিশুরাই কেরোসিন লন্ঠনের বিষধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই সৌরলন্ঠনে সেই বিপদ সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব।”
কলকাতায় অপ্রচলিত শক্তি নিয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করতে এসেছিলেন পচৌরি। বাইপাসের ধারে তৈরি ওই প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে অর্ক-ইগনু কমিউনিটি কলেজ। রাজ্য সরকারের অপ্রচলিত শক্তি বিভাগ ও ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদালয় (ইগনু)-এর যৌথ উদ্যোগে ওই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শান্তিপদ গণচৌধুরী বলেন, কী ভাবে রাজ্যে এবং সারা দেশে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বাড়ানো যায়, সেই ব্যাপারে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ছাত্রছাত্রীদের। |