সম্পাদকীয় ২...
দায় নারীর!
র্নাটকের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সি সি পাটিল মহাশয় নিঃসন্দেহে ইতিহাসমনস্ক। স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন, ভারতের অজস্র নদী নারীর নামাঙ্কিত। অর্থাৎ, ভারত চিরকালই নারীকে মর্যাদার উচ্চাসনে বসাইয়াছে। এখনও সেই ধারাটিই বজায় রাখা উচিত। কিন্তু পাটিল মহাশয়ের মতে, সরিষার ভিতরেই ভূত। নারীই যদি যৌন প্ররোচনামূলক বস্ত্রাদি পরিধান করে, ফলে শরীরের বিভিন্ন কন্দর দৃশ্যমান হয়, বেচারা পুরুষপুঙ্গবের আর কী-ই বা করিবার থাকে? পাটিল মহাশয় অতঃপর বলেন নাই। বুঝ মন যে জান সন্ধান। নারীগণ দ্রুত সেই অনুচ্চারিত বাচ্যার্থটি বুঝিয়া লইবেন, সন্দেহ কী? যদি নিজ শরীর যথাসাধ্য আবৃত করিয়া না রাখো, ইন্দ্রিয়ের তাড়নাবশত পুরুষেরা ধর্ষণ আদি অপকর্ম করিয়া ফেলিতেই পারে। অর্থাৎ, স্বীয় নিরাপত্তার ভার নারীদেরই নিজ হস্তে তুলিয়া লইতে হইবে। উল্লেখ্য, মন্ত্রিবরের এই মন্তব্যের মাত্র কিছু ঘণ্টা পূর্বেই অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের মহানির্দেশক দীনেশ রেড্ডি মহাশয় বলিয়াছিলেন, মহিলারা সালোয়ার কামিজ-এর ন্যায় ‘আধুনিক’ পোশাক পরিবার জন্যই পুরুষের যৌন লালসা বাড়িয়া উঠে। বস্তুত, রেড্ডি মহাশয়ের মন্তব্যের উপর টিপ্পনী করিবার সময়েই পাটিল মহাশয়ের উপরোক্ত বিবৃতিটির জন্ম।
এই জাতীয় অন্যায় এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য নূতন কিছু নহে। পূর্বেও অনেকে এমন কথা বলিয়াছেন। আশঙ্কা জাগে, পরেও অনেকে বলিবেন। সমস্যা ইহাই যে, এই জাতীয় মন্তব্যের ধারা বহমান। পুরুষতন্ত্র দৃষ্টিশক্তিকে আচ্ছন্ন না করিলে এই ধরনের কথাবার্তা আসে না। ‘থ্রি জি টেলিফোনি’র যুগে ভারতে আধুনিকতার বিস্তারটি বিচিত্র হইয়াছে, সন্দেহ নাই। পাশাপাশি, নির্বুদ্ধিতার ধারাটিও যে একই ভাবে বহিয়া চলিয়াছে, তাহাও খেয়াল রাখা উচিত। এই মনোভাবে আসমুদ্রহিমাচল শামিল। শুধুমাত্র অন্ধ্রপ্রদেশ এবং কর্নাটকই নহে, অন্যত্রও এই ধারা বহিয়া চলে। কেহ বলিয়া ফেলেন। কেহ মনের কথাটি মনেই রাখিয়া দেন। যিনি বলিয়া ফেলিয়াছেন, মনে মনে তাঁহার নির্বুদ্ধিতায় কৌতুক বোধ করিয়া সঙ্গোপনে বলেন, ‘কথাটি কিন্তু ঠিকই’। মুখ ফুটিলে বুঝা যায়, ধাঁচাটি একই রকম। নারী যদি পুরুষের যৌন-তাড়নার শিকার হয়, তাহার দায় পুরুষের উপর চাপাইলে চলিবে না। পুরুষের নৈতিক অবনমন যদি ঘটিয়াই থাকে, তাহাও নেহাতই দায়ে পড়িয়া। চক্ষু বুজিয়া রাস্তাঘাটে চলা যায় না এবং চক্ষুরিন্দ্রিয়ে যদি নারীর দেহবল্লরী উদ্ভাসিত হয়, কী আর করা যাইবে?
সভ্যতার মৌলিক একটি সূত্র, অন্যের উপস্থিতিকে, সেই উপস্থিতির স্বাধীনতাকে স্বীকার করিয়া লওয়া। সেই স্বীকৃতির ভিতর শুধু অন্যের নহে, নিজেরও একটি স্বাধীনতার বোধ বিধৃত। নারী কী রূপ বস্ত্র পরিয়া চলিবে, তাহা নারীর নিজস্ব বিষয়। ব্যক্তিগত বিষয়। যদি তর্কের খাতিরে ধরিয়াও লওয়া হয় যে, কোনও আধুনিকাকে দেখিয়া কোনও পুরুষ কামার্ত বোধ করিলেন, স্মরণে রাখিতে হইবে, তাহাও সেই পুরুষটির ব্যক্তিগত অনুভূতি। সেই অনুভবের দায় কোনও নারীর উপরে চাপাইয়া দেওয়া এবং ফলস্বরূপ সেই নারীর শ্লীলতাহানির ন্যায় কাজ শুধু অশালীন নহে, অ-সভ্যও বটে। যদি এই দায়িত্ব কেহ পালন না করেন, ইন্দ্রিয়ের তাড়নায় নারীর উপর অত্যাচার করেন, তাঁহাকে যথাযথ সহবৎ শিখাইবার দায়িত্ব প্রশাসনের। সেই কাজটি না করিয়া প্রশাসন যদি নারীর পোশাককেই ধর্ষণের ন্যায় যৌন অত্যাচারের জন্য দোষারোপ করে, তখন সেই কাজ নির্বুদ্ধিতার তো বটেই, একটি বিচিত্র দায়িত্বজ্ঞানহীনতারও পরাকাষ্ঠা হইয়া উঠে। ব্যক্তির স্বাধীনতা একটি গভীর বস্তু। সমস্যা হইল, ‘ব্যক্তি’ অর্থে কার্যত ‘পুরুষ’কেই গণ্য করা হয়। লিঙ্গ-পরিচয় একটি বিশেষ খাঁচার ভিতরেই আবদ্ধ থাকে। নারী আড়ালেই পড়িয়া যায়। নূতন বৎসর আসিল। ভাবনায় নূতন স্পর্শ আসিবে কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.