কলকাতাকে লন্ডন আর দার্জিলিংকে সুইৎজারল্যান্ড করে তোলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে রাজারহাট-নিউ টাউনের নাম। নিউ টাউনকে সাজিয়ে তোলা হবে সিঙ্গাপুরের মতো করে। তারই অঙ্গ হিসেবে ‘এলিভেটেড এয়ার-রেল ট্যাক্সি’র পরিকল্পনা করছে রাজ্য। সোমবার নিউ টাউনে হিডকো ভবনে এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেই সঙ্গে পুরমন্ত্রী জানান, উন্নত শহর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই মেট্রো রেলের পাশাপাশি একটি ‘এলিভেটেড এয়ার-রেল ট্যাক্সি’রও পরিকল্পনা হচ্ছে। এর ফলে কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলি থেকে কম সময়ে রাজারহাট-নিউ টাউনে যাতায়াত করা যাবে।
পুরমন্ত্রী আরও জানান, নিউ টাউনে হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণ ও জঞ্জাল সাফাইয়েও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই কলকাতায় হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়েছেন। সে পথেই নিউ টাউনে এ বার হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে হিডকো। পুরমন্ত্রী বলেন, “নিউ টাউনকে হোর্ডিংয়ের জঙ্গল করা যাবে না। প্রয়োজনে এলইডি-র ব্যবহার করে হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণ করা হবে।” জঞ্জাল সাফাই অভিযানের জন্য এ দিন আটটি ছোট-বড় গাড়ি চালু করা হয়। জৈব ও অজৈব পদার্থ আলাদা করে সাফাইয়ের জন্য সচেতনতার প্রসারেও জোর দেন পুরমন্ত্রী। রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত জানান, আবর্জনার জৈব অংশ দিয়ে সার তৈরি হয়। নিউ টাউনের গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা তা দিয়ে হর্টিকালচারের কাজ করতে পারবেন। এতে কর্মসংস্থানও হবে।
নিউ টাউনে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের বিষয়েও দ্রুত ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার। বাম সরকারের আমলে শুরু হওয়া অসমাপ্ত পানীয় জল প্রকল্পে বিপুল লোকসান প্রসঙ্গে পুরমন্ত্রী জানান, তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তার রিপোর্ট পেলে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে সরকার।
এ দিকে, বাম আমলে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব যে সব জমি বিলি করেছিলেন, সেগুলিকে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পুরমন্ত্রীর বক্তব্য, মন্ত্রীদের কোনও আলাদা কোটা থাকবে না। সে কারণেই ১৫টি প্লট নিলামের মাধ্যমে বিলি করা হবে বলে জানান হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রেস্তোরাঁ এবং বাজারের জন্যও এই প্লট দেওয়া হবে। আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তার জন্য আবেদন করা যাবে। পাশাপাশি, বাতিল হয়ে যাওয়া রাজারহাট-ভাঙর উন্নয়ন পর্ষদে (যা বর্তমানে হিডকো দেখে) ‘ল্যান্ড জোনিং রেগুলেশন’ করা হবে। অর্থাৎ, ওই জমিগুলি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি হবে। দেবাশিসবাবু আরও জানান, নিউ টাউনের ভগ্নপ্রায় যাত্রাগাছি সেতুটিকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নতুন করে গড়া হবে।
এ দিন হিডকো ভবনে ‘বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ড্যান্স’ কর্মসূচিরও সূচনা করেন পুরমন্ত্রী। এই পদ্ধতিতে হাতের ছাপ কিংবা কার্ড পাঞ্চ করে অফিসে ঢুকতে হবে। কাজের পরিবেশ উন্নত করতেই এই পরিকল্পনা বলে জানান কর্তৃপক্ষ। পুরমন্ত্রী জানান, ট্রেড ইউনিয়নগুলির সঙ্গে আলোচনা করে অন্য সরকারি ভবনেও এই ধরনের পরিকল্পনা কার্যকর করার চিন্তা রয়েছে রাজ্যের। |