যুবক নেশাগ্রস্ত ছিলেন কি
ময়না-তদন্তের রিপোর্ট ও বান্ধবীর বয়ানে গরমিল
ক্ষিণ কলকাতার অভিজাত আবাসন চত্বরে এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মিলল সোমবার। কৌশিক দত্ত নামে ওই যুবকের দেহের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, তাঁর পাকস্থলীতে মদ পাওয়া যায়নি। আর রিপোর্টের এই তথ্য থেকেই কৌশিকবাবুর মৃত্যুর কারণ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। পাশাপাশি পুলিশের দাবি, ঘটনার রাতে কৌশিকবাবু ওই আবাসনে যে বান্ধবীর ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন, সেই বান্ধবীই তাদের জানান, কৌশিকবাবু মদ্যপান করেছিলেন।
রবিবার ভোরে সল্টলেকের করুণাময়ীর বাসিন্দা ৩৭ বছরের কৌশিকবাবুর মৃতদেহ মেলে প্রিন্স অনোয়ার শাহ রোডের ওই অভিজাত বহুতল আবাসনের চত্বরে। ওই আবাসনের তিন নম্বর টাওয়ারের ৩১ তলার একটি ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে তিনি পড়ে যান বলে জানায় পুলিশ। ৩১ তলার ওই ফ্ল্যাটটি কৌশিকবাবুর এক বান্ধবীর। সোমবার কৌশিকবাবুর মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হয়। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট ও কৌশিকবাবুর বান্ধবীর বয়ানের গরমিলই ধন্দে ফেলেছে তদন্তকারীদের।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, অনেক উঁচু জায়গা থেকে নীচে পড়ে যাওয়ায় মৃত্যু হয়েছে কৌশিকবাবুর। তাঁর দেহের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্নও মিলেছে। কৌশিকবাবুর মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, সেটাই ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
পুলিশের দাবি, কৌশিকবাবুর বান্ধবী জানিয়েছেন, শনিবার, বর্ষশেষের সন্ধ্যায় তাঁর ফ্ল্যাটে কোনও অনুষ্ঠান ছিল না। অনুষ্ঠান ছিল তাঁদের আবাসনের একতলায়। আবাসন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগেই ওই অনুষ্ঠান হয়। আট বছরের মেয়েকে নিয়ে কৌশিকবাবুর বান্ধবী ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তাঁর অতিথি হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন কৌশিকবাবু। ওই মহিলার স্বামী কর্মসূত্রে মুম্বইতে থাকেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা তাদের বলেছেন, ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে পড়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে তিনি ও তাঁর মেয়ে কৌশিকবাবুকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই গৃহবধূ আরও জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁর সঙ্গে কৌশিকবাবুর পরিচয়। জিজ্ঞাসাবাদে কৌশিকবাবুর মা অণিমাদেবী জানিয়েছেন, তিনিও আগে ছেলের ওই বান্ধবীর ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। এ দিন কৌশকবাবুর দিদি জয়ন্তী করসরকার করুণাময়ীর বাড়িতে বসে বলেন, “ভাইয়ের ওই বান্ধবীর সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই আমাদের পরিবারের সম্পর্ক।” ভাই ঘটনার রাতে মদ্যপান করে থাকতে পারেন বলেও জানিয়েছেন জয়ন্তীদেবী। শনিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ অণিমাদেবীর সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন কৌশিকবাবু। মায়ের শরীর খারাপ বলে গত জুলাইয়ে বিদেশের চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন কৌশিকবাবু। তার পর তিনি অন্য কোথাও চাকরি করছিলেন না বলেই তাঁর পরিবারের তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছে। তবে তাঁর স্ত্রী দীর্ঘ দিনই অন্যত্র থাকেন।
পুলিশের দাবি, কৌশিকবাবুর বান্ধবী জানিয়েছেন, রাত সওয়া ২টো নাগাদ মেয়েকে নিয়ে একতলার অনুষ্ঠান ছেড়ে ফ্ল্যাটে উঠে আসেন তিনি। এর কিছু ক্ষণ পর তাঁর মোবাইলে ফোন করেন কৌশিকবাবু। বলেন, তাঁর মেয়েকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে কৌশিকবাবু উপরে যেতে চান। দীর্ঘ ক্ষণ অনুষ্ঠানে রয়েছেন দেখে আবাসনের রক্ষীরাও কৌশিকবাবুকে উপরে উঠতে বাধা দেননি। লিফটে চড়ে বান্ধবীর ফ্ল্যাটে পৌঁছন তিনি। ওই বান্ধবী পুলিশকে আরও বলেন, ফ্ল্যাটে এসে তাঁর মেয়েকে শুভেচ্ছা জানান কৌশিকবাবু। মেয়ে তখনও জেগে ছিল। কিন্তু এর পরেই তিনি এগিয়ে যান বারান্দার দিকে। ঘর ও বারান্দার মধ্যে যে ‘রোলিং গ্লাস’টি রয়েছে, তা ঠেলে বারান্দায় পৌঁছন কৌশিকবাবু। বারান্দার রেলিংটির উচ্চতা আড়াই ফুট। আচমকাই রেলিং টপকে যান তিনি। রেলিংয়ের ও পারে ইঞ্চি দশেকের একটি কার্নিস রয়েছে। তাতে দাঁড়িয়ে রেলিং ধরে ঝুলতে শুরু করেন কৌশিকবাবু। এই দৃশ্য দেখে ওই মহিলা ও তাঁর মেয়ে কৌশিকবাবুর হাত ধরতে যান। কিন্তু তার আগেই চোখের সামনে নীচে পড়ে যেতে দেখেন কৌশিকবাবুকে। অণিমাদেবীও রবিবারই জানিয়েছিলেন, ছেলের বান্ধবী তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।
তবে কৌশিকবাবু কখনওই আত্মহত্যা করতে পারেন না বলে দাবি তাঁর পরিবারের।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.