কার হেফাজতে আছেন তিনি? তাঁকে আদালতে হাজির করানোর দায়িত্বই বা কার? এই নিয়ে সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত সাত ঘণ্টার নাটক হয়ে গেল আলিপুর আদালতে। শেষ বেলায় এসএকেএম হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে আদালতে পাঠান ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত সেখানকার ডিরেক্টর রাধেশ্যাম অগ্রবালকে।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযুক্তকে এসএসকেএম থেকে হাজির করানো গেল না কেন? তা নিয়ে বিরক্ত বিচারক চৌধুরী হেফাজত করিম এক সময় ডেকে পাঠান আলিপুরের কোর্ট ইনস্পেক্টর নবকুমার গুপ্তকে। নবকুমারবাবু বলেন, “খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি।” কিছু ক্ষণ পরে ফিরে এসে তিনি আদালতকে বলেন, “অভিযুক্তকে আনার ব্যাপারে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল।” কী সমস্যা, জানতে চান বিচারক। তার পরে তিনি মন্তব্য করেন, “এ বিষয়ে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষই অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করার ব্যবস্থা করবেন। পুলিশ তাঁদের সাহায্য করবে।”
বিকেল ৪টে ৫০ মিনিট নাগাদ শুনানি শুরু হয়। আমরি-মামলার তদন্তকারী অফিসার সিদ্ধার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে বিচারক জানতে চান, অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করতে দেরি কেন? আদালতে জানানো হয়, অভিযুক্ত কার হেফাজতে রয়েছেন, সমস্যা মূলত তা নিয়েই। বিচারক তখন মন্তব্য করেন, “তথ্য আদানপ্রদান ঠিকমতো না-হওয়াতেই এ ঘটনা ঘটেছে। এক জন অন্য জনের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।”
আদালত এ দিন সরকার ও অভিযুক্ত, দু’পক্ষেরই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। সরকার পক্ষ চেয়েছিল, রাধেশ্যামকে রাখা হোক জেলের হাসপাতালে। আর অভিযুক্ত পক্ষ তাঁর জামিন চেয়েছিল। রাধেশ্যামকে ফের এসএসকেএমে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। ১৬ জানুয়ারি তাঁকে ফের আদালতে আনতে হবে। সে-দিন হাসপাতালকে ফের একটি রিপোর্ট দিতে বলেছেন বিচারক। ইতিমধ্যে চিকিৎসকের সম্মতি নিয়ে অভিযুক্তকে জেরা করতে পারবে পুলিশ। |
রাধেশ্যামকে নিয়ে আদালতে নাটক এই প্রথম নয়। রাধেশ্যাম কার হেফাজতে আছেন, তা নিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর আদালতেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। সে-দিন সরকার পক্ষ রাধেশ্যামকে পুলিশি হাজতে নিতে চেয়েছিল। অভিযুক্তের আইনজীবী চেয়েছিলেন মক্কেলের জামিন। আদালত দু’টি আর্জিই খারিজ করে দিয়েছিল। এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন রাধেশ্যাম কার হেফাজতে রয়েছেন, সেই প্রশ্ন ওঠে। ২২ ডিসেম্বর বিচারক জানিয়ে দেন, হাসপাতালে থাকলেও ওই অভিযুক্ত জেল-হাজতেই রয়েছেন।
সাধারণত আসামিদের জেল বা পুলিশি হাজত থেকে বেলা ২টোর আগে আদালতের লক-আপে আনা হয়। এ দিন সময়মতোই আদালত বসে। আমরি-কাণ্ডে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী এস কে কপূর, এম এন দস্তুর, অমিত ভট্টাচার্য, অশোক মুখোপাধ্যায়, অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়, উৎপল মজুমদারেরা হাজির হন ২টোর মধ্যেই। কিন্তু সরকার পক্ষের আইনজীবীদের দেখা মেলেনি।
৩টে বাজতেই রাধেশ্যামের আইনজীবী সেলিম রহমান বিচারককে বলেন, “স্যার, শুনছি অভিযুক্তকে এখনও আনা হয়নি। তদন্তকারী অফিসারও আসেননি। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুলিশের আর্জি সংবলিত রিমান্ডও পৌঁছয়নি আদালতে।” এ ভাবে প্রায় সওয়া ৪টে বেজে যায়। অন্যান্য মামলার শুনানি শেষ করে তত ক্ষণে খাসকামরায় চলে গিয়েছেন বিচারক। তখন অভিযুক্তের আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় বিচারকের কাছে লোক পাঠিয়ে জানতে চান, তাঁরা কত ক্ষণ অপেক্ষা করবেন। বিচারক তাঁদের আরও কিছু ক্ষণ থাকতে অনুরোধ জানান।
রাধেশ্যামকে আদালতে তোলায় সাহায্য করতে তদন্তকারীরা সকাল ৯টাতেই এসএসকেএমে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু বেঁকে বসে হাসপাতাল। পিজি-র তরফে বলা হয়, তারা চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে পারে। হাসপাতাল থেকে রাধেশ্যামকে আদালতে তোলার ব্যাপারে তাদের কোনও দায়িত্ব থাকার কথা নয়। পরে আদালতের নির্দেশ জেনে দুপুরে পিজি-র সুপার প্রভাস চক্রবর্তী চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে রাধেশ্যামকে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিকেল ৪টে ২৫ মিনিটে অ্যাম্বুল্যান্সে আনা হয় রাধেশ্যামকে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক জন চিকিৎসক, এক জন নার্স, হাসপাতালের এক অ্যাটেনড্যান্ট এবং দুই পুলিশকর্মী। আইনজীবী কপূর জামিনের আবেদন জানিয়ে বলেন, তাঁর মক্কেল অসুস্থ। তাঁর আরও একটি বাইপাস অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন রয়েছে। দেশ-বিদেশের চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। নিজের বাড়িতে পুলিশি পাহারায় রেখে রাধেশ্যামের চিকিৎসা করানো যেতে পারে।
সরকার পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, জেল হাসপাতালেও অনেক বন্দির চিকিৎসা হয়। বন্দির শারীরিক অবস্থা বিচার করে মেডিক্যাল অফিসার সরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার সুপারিশও করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তের ছেলে, বিবাহিতা মেয়ে-সহ তিন জন ফেরার। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলছে। এই অবস্থায় অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া উচিত হবে না। |