অবরোধ ছাড়া উপায় কী, বলছেন চাষিরা
ক দিকে বাড়ছে কৃষিঋণের সুদের হার। অন্য দিকে ধান বিক্রি করতে না পারায় নতুন কৃষিঋণের সুযোগও কমছে। এর ফলে পরের বার চাষের জন্য মহাজনের কাছে চড়া সুদে শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বিক্ষুব্ধ হয়ে শেষ অস্ত্র হিসেবে বেছে নিচ্ছেন পথ অবরোধ।
কয়েক দিন আগেই আড়তদারদের মাধ্যমে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার দাবিতে দুবরাজপুরের জয়দেব মোড়, বোলপুরের সিয়ান এলাকায় পথ অবরোধ করেন এলাকার চাষিরা। সোমবার একই দাবিতে সকাল ৮টা থেকে বোলপুরের কোপাই কদমতলায় পথ অবরোধ করেন এলাকার চাষিরা। চাষিদের ক্ষোভ, কৃষক সভা বলছে, সরকারি কৃষিনীতিই ত্রুটিপূর্ণ। প্রশাসন বলছে, ওই নীতির বাইরে গিয়ে কিছু করা যাবে না। অন্য দিকে, জেলার চালকল মালিক সমিতির বক্তব্য, কৃষকদের সচেতনতার অভাব। সহায়ক মূল্যে ধান কেনা নিয়ে এই চাপান-উতোরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান বিক্রি করতে গিয়ে নাকাল হচ্ছেন তাঁরা।
আলবাঁধা গ্রামের প্রশান্ত ঘোষ, দমদমা গ্রামের প্রবীর ঘোষ বলেন, “পথ অবরোধ করা ছাড়া আমাদের উপায় কী!
গাড়িতে ধান রেখে অবরোধ বোলপুরের কোপাই কদমতলায়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
গত বছর এলাকার আড়তদাররা ধান কিনতেন। দাম কিছুটা কম হলেও ধান বিক্রি করে টাকা মিলত। সেই টাকায় কৃষিঋণ মিটিয়েও ফের ধান কিনে চাষ করা যেত। এ বার ধান বিক্রি না হওয়ায় বেশির ভাগ চাষিই বকেয়া ঋণ মেটাতে পারেননি। এর ফলে পরবর্তী চাষ তো মার খাচ্ছেই, উল্টে অনর্থক সুদের বোঝা ঘাড়ে চাপছে। তার পরিমাণ সহায়ক মূল্যে পোষাচ্ছে না। তাই চড়া সুদে মহাজনের কাছে ধার নিতে হচ্ছে।”
অন্য দিকে, লাভপুরের বিবেকানন্দ মণ্ডল, কাজিপাড়ার ইসমাইল শেখ জানান, সরকার চাষি প্রতি সর্বাধিক ১০ কুইন্টাল পর্যন্ত সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কথা ঘোষণা করেছে। উদ্বৃত্ত ধান চাষিরা কোথায় বিক্রি করবে তার ব্যবস্থা করে দেয়নি। প্রান্তিক চাষিদের পক্ষে স্বল্প পরিমাণ ধান মিলে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তা ছাড়া মিলে নিয়েও যে পরিমাণ বাটা কাটা হচ্ছে, হয়রানি হচ্ছে, তা নামান্তরে আড়তদারকেই ধান বিক্রি করার সামিল হচ্ছে।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি দীপক প্রামাণিক অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, ১০ কুইন্টাল ধানে প্রায় ৬৮ কেজি চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ চাষির ধান থেকেই ওই পরিমাণ চাল মেলে না। অনেকেই ধানের মধ্যে আগড়া ধুলোবালি মিশিয়ে আনছেন। সেক্ষেত্রে চাষির হয়রানি এড়াতেই সরকার নির্ধারিত কুইন্টাল প্রতি ২ কেজি খাদ বাদ দেওয়ার পরেই অতিরিক্ত যতটুকু পরিমাণ খাদ মিলেছে সেই পরিমাণই খাদ বা বাটা হিসেবে বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের মতো এ রাজ্যে যন্ত্রের মাধ্যমে ধান ঝাড়াই, বাছাই করার কোন ব্যবস্থা নেই বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। কৃষক সভার সম্পাদক আনন্দ ভট্টাচার্যের মতে স্থানীয় ভাবে ধান ক্রয়কেন্দ্র না থাকার জন্যই এই অবস্থা। জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মীনা বলেছেন, “সমবায় গুলির মাধ্যমে ধান কেনা শুরু না হওয়া পর্যন্ত সমস্যা থাকবেই। সমবায় সমিতিগুলির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ধান কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকাও তাদের দেওয়া হয়েছে।” এ দিন বিকেল ৫টা থেকে অবরোধকারীরা অনশনও শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত বিডিও (বোলপুর) অমল সাহা ও স্থানীয় বিধায়ক গদাধর হাজরার মধ্যস্থতায় তাঁরা অবরোধ ও অনশন প্রত্যাহার করেন। সমাধান সূত্র খোঁজার জন্য আজ মঙ্গলবার চালকল মালিক এবং চাষিদের নিয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে আলোচনা করা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.