বিশেষজ্ঞদের মতে, থ্যালাসেমিয়া শিকড় গেড়ে বসেছে টোটো জনজাতির শরীরে। এ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার মাদারিহাট ব্লকে সাত পুরুষ ধরে বাস করছেন টোটোরা। মাথাগুনতিতে তাঁঁদের সংখ্যা প্রায় ১,৪০০। পরিবারের সংখ্যা বড়জোর তিনশো। মাদারিহাট থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে ভুটান সীমান্ত লাগোয়া পাহাড়ি গ্রাম টোটোপাড়া। সেখানেই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রাত্যহিক জীবনযাপন টোটোদের।
ওঁরা কখনই ‘টোটোল্যান্ড’-এর দাবি করেননি। দাবি জানাননি স্বশাসিত পরিষদ গঠনের। টোটোরা চেয়েছিলেন সমাজের অন্য সবার মতো মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে। সংখ্যায় কম বলেই ওঁরা কখনও বাধা দিতে পারেননি টোটোপাড়ায় অন্যরা বসতি করতে এলে। সম্ভবত সেই কারণেই টোটোপাড়া-বল্লালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে ওঁদের হয়ে গলা ফাটানোর কেউ নেই। |
টোটো-কন্যা স্নাতক হলে তার পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। টোটোপাড়ায় মোট জমির পরিমাণ বড়জোড় ২,০০০ একর। এই জমির মাত্র ৩১২ একরের মালিকানা আপাতত টোটোদের হাতে। জমি চিহ্নিতকরণের বিষয়টি নিয়ে টোটোরা অনেক বারই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন রাজ্যের তফসিলি জাতি ও উপজাতি কল্যাণ দফতরে। আশ্বাস পেয়েছেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ দেখা যায়নি। রাজ্যে পরিবর্তন হয়েছে। আশায় আছেন টোটোরাও। প্রাচীন এই জনজাতিও কিন্তু এ রাজ্যের বাসিন্দা। সসম্মানে বাঁচার স্বপ্ন তাঁরাও দেখেন।
কানন দত্তগুপ্ত।শ্যামাপ্রসাদ পল্লি, কোচবিহার
|
বেশ কয়েক বছর ধরে লেপচারা বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন। দিল্লিতেও তাঁরা দরবার করেছেন। ইন্ডিজিনাস লেপচা ট্রাইবাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ল্যাঙ সঙ তামসাঙ সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে সংযোগ রেখে চলেছেন। সিকিম, ভুটান, দার্জিলিঙ, কালিম্পঙ, মিরিক, নেপাল, তরাই-ডুয়ার্সের নানা প্রান্তে তাঁরা ছড়িয়ে আছেন। পশ্চিমবঙ্গে এঁদের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার, কালিম্পঙেই ৪৫ হাজারের মতো। কালিম্পঙ ও সন্নিহিত ২০৬টি পাহাড়ি গ্রামে বিদ্যুৎ, পানীয় জল, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। লেপচারা ৬৪ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। তাঁরা সিকিমের প্রাচীন জনজাতি। লেপচা ভাষা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ভাষা। বিগত সহস্রাব্দে লেপচা ভাষা স্বাধীন ভাবে গড়ে উঠেছে এবং তার সরলতা ও শুদ্ধতা সংরক্ষিত হয়েছে। এই ভাষার নিজস্ব লিপি, বর্ণমালা বিদ্যমান। কে পি তামসাঙ প্রণীত দ্য লেপচা-ইংলিশ এনসাইক্লোপিডিক ডিকশনারি-র শব্দসংখ্যা ১৪ হাজার। তাঁদের সাহিত্য-সংস্কৃতি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। অথচ তাঁরা তাঁদের ভাষার স্বীকৃতি পাননি। তাঁরা তফশিলভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সরকারি ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত। অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল।
সম্প্রতি গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসন(জিটিএ) সরকারি অনুমোদন পেল। এর কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পরিচালনের ভার দার্জিলিঙ-কেন্দ্রিক নেতাদের হাতে। লেপচা জনগোষ্ঠী শুধু নয়, পাহাড়ের লিম্বু, শেরপা প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর কোনও প্রতিনিধি জিটিএ-তে নেই। স্থানীয় প্রশাসনে সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি থাকলে তাঁরা নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরার সুযোগ পেতেন। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকলের সমান অধিকার প্রত্যাশিত।
রতন বিশ্বাস। হাকিমপাড়া, শিলিগুড়ি
|