মমতাকে কতটা আক্রমণ, মতভেদ ফ্রন্টের অন্দরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর সরকারকে কতটা আক্রমণের পথে যাওয়া হবে, সেই প্রশ্নে টানাপোড়েন বাড়ছে বামফ্রন্টের অন্দরমহলে। মমতার সরকারকে এখনই চাঁছাছোলা আক্রমণে না-যাওয়ার পক্ষেই মত উঠে এসেছে সদ্য অনুষ্ঠিত সিপিআইয়ের রাজ্য সম্মেলনে। যাতে সম্মতি জানিয়েছেন দিল্লির অজয় ভবনের নেতারাও।
নতুন সরকারের বয়স সাত মাস পেরিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের সমালোচনায় কতটা কড়া সুর নেওয়া হবে, তা নিয়ে বামফ্রন্ট এখন দ্বিধাবিভক্ত। কিন্তু তার মধ্যেই সিপিএমের কিছু নেতা যে ভাবে মমতাকে ফের ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ শুরু করেছেন, তা মোটেই ঠিক রণনীতি নয় বলে মনে করছেন সিপিআই নেতৃত্ব। বিতর্ক বেধেছে মমতার উদ্দেশে ‘হিটলারের নাতনি’ শীর্ষক সিপিএমের রাজ্য নেতা মহম্মদ সেলিমের আক্রমণ ঘিরে। সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গুরুদাস দাশগুপ্ত মনে করছেন, এই আক্রমণ আদৌ ‘রাজনৈতিক ভাষা’ নয়। বরং, সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় বিনয় কোঙার থেকে অনিল বসুরা যে ভাবে বিরোধীদের সম্পর্কে কটূক্তি করে মানুষের বিরাগভাজন হয়েছিলেন, সেই স্মৃতিই ফিরে আসবে এই ধরনের কটাক্ষে। মানুষের কাছে ‘ভুল বার্তা’ যাবে। গুরুদাসবাবুর সঙ্গে এ বিষয়ে একমত সিপিআই সাধারণ সম্পাদক এ বি বর্ধনও।
সদ্যসমাপ্ত রাজ্য সম্মেলনে গুরুদাসবাবু মূলত তিনটি বিষয়ে জোর দিয়েছেন। প্রথমত, তৃণমূলের সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে ‘স্বাভাবিক নিয়মে’ই ক্ষোভ তৈরি হবে। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ধৈর্য হারিয়ে ‘আক্রমণাত্মক ভাষা’ ব্যবহার করা চলবে না। মানুষকে ‘বোঝানো’র ভাষা নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, ‘গঠনমূলক’ বিরোধীর ভূমিকা পালন করেই কেন্দ্রে ও রাজ্যে তৃণমূলের অবস্থানের মধ্যে যে অন্তর্বিরোধ রয়েছে, তা তুলে ধরতে হবে। তৃতীয়ত, বাম কর্মীদের আরও জনসংযোগ বাড়াতে হবে। দলের অন্দরে গুরুদাসবাবুর মত, ৩৪ বছরের বাম শাসনের পরে যে সরকার এসেছে, তাকে সময় দেওয়া দরকার। মমতার সরকারের যে অনেক ভুলত্রুটি রয়েছে, তা তাঁরাও মানছেন। কৃষকেরা ধান-পাটের দাম পাচ্ছেন না। পরিবহণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ব্যবস্থায় গোলমাল হচ্ছে। কিন্তু এখনই এমন ভাবে আক্রমণ করা চলবে না, যাতে মনে হয় যে, বাম নেতারা কয়েক মাসের মধ্যেই গদিতে ফিরতে মরিয়া হয়ে গিয়েছেন! গুরুদাসবাবুর মত, এই রকম হলে তাঁদের প্রতি মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হবে না।
দলের অন্দরে এই কথা বললেও আসলে সিপিএম নেতৃত্বের উদ্দেশেই ‘বার্তা’ পাঠাতে চেয়েছেন সিপিআই নেতৃত্ব। গুরুদাসবাবুর বক্তব্য, সারা দেশের আর্থিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব পশ্চিমবঙ্গেও পড়বে। তৃণমূল কেন্দ্রের শরিক। অথচ নানা আর্থিক নীতিতে তারা কেন্দ্রের বিরোধিতা করছে। সিপিএম নেতারা একে মমতার ‘দ্বিচারিতা’ বললেও গুরুদাসবাবু কড়া আক্রমণে রাজি নন। তাঁর যুক্তি, বামেদের এখন প্রকাশ্যে বলতে হবে যে, তাঁরা তৃণমূলকে সময় দিতে রাজি। ভাল কাজ করলে ভাল বলতে হবে। আবার ভুল করলে সমালোচনা করতে হবে। শুধু বামপন্থী ঐক্যই নয়, সমমনস্ক দল ও মানুষকে এক ছাতার তলায় আনতে হবে।
মমতার সরকারের মোকাবিলায় কী রণকৌশল নেওয়া হবে, তা চূড়ান্ত করতে না-পেরে রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব এখন কার্যত সব পন্থাই খুলে রেখেছেন। এক দিকে জমি বা শিল্পের মতো নীতিগত বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-নিরুপম সেনরা। বিধানসভায় সরকারের দৈনন্দিন কাজকর্মে গলদ ধরিয়ে দিচ্ছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি আবার বিরোধী দলনেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও বসছেন।
কিন্তু রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের আচরণে সিপিএমের নিচু তলায় ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। সেই ক্ষোভ মাথায় রেখেই জেলা সম্মেলনে গিয়ে সেলিম, শ্যামল চক্রবর্তী, গৌতম দেবেরা কড়া আক্রমণের পথ নিচ্ছেন। মদ, জল থেকে মিড ডে মিলে সিপিএম বিষ মেশাচ্ছে বলে অপপ্রচার বা রাজ্যে ইতিহাসের পুরনো স্মারক ‘মুছে ফেলার চেষ্টা’ এ সবই ফ্যাসিবাদের কায়দা বলে সিপিএম মনে করে। সেই জন্যই ‘হিটলারের নাতনি’ জাতীয় আক্রমণ করে সেলিমেরা নিচু তলার ক্ষোভ বার করে দিতে চাইছেন বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
সিপিএমের চেয়ে অন্য বাম শরিকেরা যে মমতার কাছে তুলনায় বেশি ‘গ্রহণযোগ্য’, তা নিয়ে বিশেষ দ্বিমত নেই বাম শিবিরে। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা গুরুদাসবাবুর অনুরোধ মেনে ধর্মঘটের দিন না-করে মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন পিছিয়ে দেন। মায়ের মৃত্যুর দিন উপস্থিত থাকার পাল্টা ‘কৃতজ্ঞতা’ জানাতে চলে যান ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অশোক ঘোষের কাছে। শরিকদের প্রতি মমতার ‘নরম’ মনোভাবের কথা দলের অন্দরে গুরুদাসবাবুও অস্বীকার করছেন না। বাম সূত্রের ব্যাখ্যায়, এই কারণেই মমতাকে মোকাবিলার কৌশলেও শরিকদের সঙ্গে সিপিএমের একাংশের
মতের ফারাক দেখা যাচ্ছে। |
পরিবহণ শ্রমিকদের জন্য প্রকল্প-প্রচার
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পরিবহণ শ্রমিকদের হাতে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা পৌছে দিতে আরও এক ধাপ এগোল রাজ্য শ্রম দফতর।
বর্ষশেষের দিনে গোটা কলকাতার বিভিন্ন বাস, ট্যাক্সি এবং অটো স্ট্যান্ডে গিয়ে পরিবহণ শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচার চালিয়েছে শ্রম দফতরের অধীন কলকাতা ‘এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড ল’ এবং ‘মিনিমাম ওয়েজ’ শাখা। এই উদ্যোগে তাঁরা ভাল সাড়া পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনার বিতান দে। এর পরে ওই সব অঞ্চলে শিবির করে পাসবই ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পরিবহণ শ্রমিকদের দেওয়া হবে। |