বর্ষশুরুর দিন উপচে পড়া ভিড়ের জন্য হাজারদুয়ারি মিউজিয়াম দেখতে পেলেন না অনেকেই। টিকিট কেটে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও ভিড় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মূল গেটের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।
হাজারদুয়ারি চত্বরে এই দিন সব দিকেই মানুষের মাথার মিছিল। একই চিত্র নদিয়ার মায়াপুর ও বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যেও। ওই দু’টি জায়গাতেও ভিড় ছিল অন্য বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। মানুষের ভিড়ে বর্ষশুরুর দিন পাশাপাশি দুটি জেলা নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ যে উৎসবনগরীতে পরিণত হয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
বর্ষশুরুর দিন হাজারদুয়ারিতে এইন অবস্থা যে হবে, তার পূর্বাভাস ছিল গত ২৫ ডিসেম্বরের ভিড়েই। ওই দিন ১০ হাজার ৮৮০টি টিকিট বিক্রি হয়। এদিন টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার, যা গত বারের তুলনায় ৪ হাজারেরও বেশি। হাজারদুয়ারি মিউজিয়ম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের ডিসেম্বর জুড়ে যেখানে ৫৮ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল, এবছর সেখানে রেকর্ড সংখ্যক টিকিট বিক্রি হয়েছে১ লক্ষ ১৫ হাজার ২৬টি।
মায়াপুরের ইস্কনে এদিন প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষের ভিড় ছিল। নবদ্বীপেও একই চিত্র। সমস্ত মঠ-মন্দির-অতিথি আবাস সর্বত্রই মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস বলেন, “অন্য বারের তুলনায় এবারে পর্যটকদের সংখ্যা দ্বিগুণ। বিভিন্ন স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় অভিভাবকেরা খোলা মনে বেরিয়ে পড়তে পেরেছেন বলে আমার মনে হয়েছে। সেই সঙ্গে ঠান্ডার প্রকোপ কম থাকায় পর্যটকদের ভিড় বাড়ার অন্য একটা কারণ।” |
বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যে প্রায় হাজার দুয়েক টিকিট বিক্রি হলেও এদিন সকাল থেকে ওই চত্বর পিকনিক পার্টিদের ভিড়ে ভরে ওঠে। অভয়ারণ্যের ভেতর ও বাইরে ছিল জেলা ও জেলার বাইরে থেকে আসা প্রচুর মানুষের ভিড়। ওই চত্বরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর বিভিন্ন জায়গায় সারি দিয়ে বক্স বাজিয়ে পিকনিক করতে দেখা গিয়েছে। গত ঈদের দিন পর্যটকদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দু’টি হরিণের মৃত্যু হয়। এ জন্য অভয়ারণ্যে এদিন বাড়তি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়। বিট অফিসার অনুকূল রায় বলেন, “কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, এজন্য বাড়তি সতর্কতা ছিল বনকর্মীদের মধ্যে।”
লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “হাজারদুয়ারি চত্বর, নবাব বাহাদুর হাইস্কুল মাঠ, নিউ প্যালেস চত্বরে গাড়ির মেলা বসে গিয়েছিল। এমনকী পাড়ার অলিগলিতেও পর্যটকরা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখেন। পর্যটকরা যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করার জন্য রাস্তায় ব্যাপক যানজটও তৈরি হয়।” পরিবহণ ব্যবসায়ী মিন্টু সরকার বলেন, “অন্য সময়ে ৬০০-৬৫০ টাকায় লালবাগ নিয়ে গেলেও এই সময়ে গাড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি গাড়ি ভাড়া দিতে হয় পর্যটকদের।” বিভিন্ন গাড়ি অনুযায়ী এদিন ৮৫০-১২০০ টাকা পর্যন্ত গাড়ি ভাড়া লেগেছে। লালবাগের ভিড় এড়াতে অনেকেই এদিন ভাগীরথীর পশ্চিম পাড় লাগোয়া কিরীটেশ্বরী মন্দির, রানি ভবানির মন্দির, ডাহাপাড়া ধাম, কর্ণসুবর্ণতেও পর্যটক বেড়াতে গিয়েছেন, পিকনিকও করেছেন সেখানে। |