সম্পাদকীয় ১...
যুক্তরাষ্ট্রের সাধনা
লোকপাল বিতর্ক বহুমাত্রিক। একটি মাত্রা সংযোজন করিয়াছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্ভবত তাহাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী লোকায়ুক্তের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা কেন থাকিবে, সেই প্রশ্ন তুলিয়াছেন। ইহা যুক্তরাষ্ট্রীয়তার প্রশ্ন। শাসনতন্ত্রকে কুক্ষিগত করিবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যায় উদ্যোগের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ। সেখানেই ইহার গুরুত্ব। লোকপাল নামক অপ্রয়োজনীয় বস্তুটিকে ঢাকিসুদ্ধ বিসর্জন করিলেই সর্বমঙ্গল, কিন্তু এই শোরগোলের সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার প্রশ্নটি যখন উঠিয়া আসিয়াছে, তখন তাহাকে তাহার প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া জরুরি। জরুরি এই প্রশ্নটিকে নিছক লোকায়ুক্তের পরিধিতে সীমিত না রাখিয়া বৃহত্তর পরিসরে প্রসারিত করা। সেই প্রসারের সূত্রটিও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর মূল বক্তব্য হইতেই ধরিয়া লওয়া যায়। তাঁহার অভিযোগ সরল ও স্পষ্ট। লোকায়ুক্ত নামক প্রতিষ্ঠানটি রাজ্য স্তরের জন্য। কোনও রাজ্যে এই প্রতিষ্ঠান থাকিবে কি না, থাকিলে তাহার গঠন ও পরিচালনা কী রূপে হইবে, সেই সকল বিষয় সম্পূর্ণত রাজ্যের বিচার্য, সুতরাং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত লোকপাল বিল হইতে লোকায়ুক্ত সম্পর্কিত সমগ্র অংশটিই বাদ দিতে হইবে। এই দাবির মূলে রহিয়াছে একটি নীতি: রাজ্যের এক্তিয়ারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চলিবে না।
ইহাই যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শের প্রথম শর্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্তব্য, এই আদর্শকে অনুসরণ করিয়া রাজ্যের এক্তিয়ারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের যাবতীয় প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হওয়া। ইন্দিরা গাঁধীর জমানা হইতে এই এককেন্দ্রিক প্রবণতা উত্তরোত্তর জোরদার হইয়াছে। সংবিধানের ৩৫৬ ধারা (অপ)প্রয়োগ করিয়া বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে ফেলিয়া দেওয়ার জন্য তিনি সঙ্গত কারণেই বহুনিন্দিত, কিন্তু রাজ্যের অধিকারভঙ্গের অনেক সূক্ষ্মতর উদ্যোগ তাঁহার আমল হইতেই ক্রমাগত সম্পন্ন হইয়াছে, ইউ পি এ সরকারের দ্বিতীয় দফাতেও সেই ধারা অব্যাহত। রাজ্যের সহিত কার্যত কোনও আলোচনা না করিয়াই বাংলাদেশের সহিত তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের চেষ্টা বা শিক্ষা ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অপ্রয়োজনীয় কর্তৃত্বের মাত্রা আরও বাড়াইবার তৎপরতা ইহার দুইটি নজিরমাত্র। লক্ষণীয়, অতীতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে সতত সরব বামপন্থীরাও এককেন্দ্রিকতার মূল অন্যায়ের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিবাদ করেন নাই। যথা, পশ্চিমবঙ্গের মডেলে সারা দেশে পঞ্চায়েতি রাজের কাঠামো চালু করিতে রাজীব গাঁধীর উদ্যোগ লইয়া তাঁহারা আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করিয়াছেন, সব রাজ্যের উপর কেন একই পঞ্চায়েতি রাজ চাপাইয়া দেওয়া হইবে, সেই মৌলিক প্রশ্ন তোলেন নাই। ঠিক যেমন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো একটি কেন্দ্রীয় অধিপতির হাতে কেন রাজ্যের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকদের নির্ভর করিতে হইবে, সেই প্রশ্নও তাঁহারা তোলেন নাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিলম্বে হইলেও অন্তত একটি বিষয়ে প্রতিবাদ জানাইয়াছেন। শুভ সূচনা।
এই সূচনাকে মর্যাদা দিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মূল আদর্শকে প্রবল ভাবে প্রতিষ্ঠিত করিবার একটি সামগ্রিক উদ্যোগ জরুরি। রীতি, আইন এবং সংবিধান, তিনটি স্তরেই পরিবর্তনের প্রয়োজন। এক কথায় বলিলে, পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি হওয়া উচিত অম্বেডকরের চিন্তা। তিনি বিভিন্ন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করিতে আগ্রহী ছিলেন, সংবিধানে তাহার প্রতিফলন স্পষ্ট ও ব্যাপক। তখন নবজাত রাষ্ট্রের স্থিতি ও সংহতি লইয়া দেশনেতাদের উদ্বেগ ছিল, সেই কারণে কেন্দ্রের হাতে হয়তো কিছু বাড়তি ক্ষমতা রাখিবার প্রয়োজন ছিল। আজ সেই উদ্বেগ অনেক কম, তদুপরি রাজ্যের স্বাধিকারচেতনা অনেক বেশি, রাজনীতিও অনেক বেশি বহুধাবিভক্ত, সুতরাং কেন্দ্রের আধিপত্য খর্ব করিয়া ভারতকে একটি যথার্থ যুক্তরাষ্ট্র করিয়া তুলিবার উদ্যোগ অবিলম্বে শুরু হওয়া দরকার। পশ্চিমবঙ্গ সেই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিলে নূতন ইতিহাস রচিত হইবে। রাজ্যেরও, দেশেরও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.