এলাকায় দলের কোন গোষ্ঠী ক্ষমতাসীন থাকবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই প্রাণ গেল কেতুগ্রামের তৃণমূল নেতার। কেতুগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক কৃপাসিন্ধু সাহার খুন হওয়ার ঘটনায় এমনটা মনে করছে দলের একাংশই।
শনিবার বিকেলে কেতুগ্রামের মালগ্রামে সেচখালের ধারে কৃপাসিন্ধুবাবুর গুলিবিদ্ধ দেহ মেলে। তাঁকে খুনের অভিযোগ ওঠে দলের ওই ব্লকের কার্যকরী সভাপতি হারা শেখ-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে কেতুগ্রামের কান্দরায় রবিবার সকাল ৬টা থেকে ঘণ্টা চারেক কাটোয়া-বোলপুর রাস্তা অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। পরে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সাহানেওয়াজ শেখ দলীয় কর্মীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলেন। পুলিশ জানায়, রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। |
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, হারা শেখ এক সময়ে সিপিএমে ছিলেন। কৃপাসিন্ধু ছিলেন বিজেপি-তে। দু’জনে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে এলাকায় কোন গোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকবে তা নিয়েই দ্বন্দ্ব শুরু হয়। গত লোকসভা ভোটের পর থেকে কেতুগ্রামে তৃণমূলের প্রতিপত্তি বাড়ে। সেই সময়ে কান্দরায় দলে হারা শেখ-গোষ্ঠীর প্রভাব বেশি ছিল। অভিযোগ, স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে ব্যবসাদার, ঠিকাদার-সহ নানা লোকজনের থেকে তোলাবাজি শুরু করে হারা শেখের অনুগামীরা। কৃপাসিন্ধু সাহা দলের মধ্যে এ সবের প্রতিবাদ করেন। গত বিশ্বকর্মা পুজোর সময়ে জোর করে চাঁদা আদায় করা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট ও বোমাবাজি হয়। কালীপুজোর সময়ে ফের কান্দরায় দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল বাধে। বোমাবাজিও হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হারা ও কৃপাসিন্ধু আগেও পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সমস্যা মেটানোর জন্য নভেম্বরে কেতুগ্রামের ফুটিসাঁকোতে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি তথা দলের কেতুগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল দু’পক্ষকে নিয়ে বসে মীমাংসার চেষ্টা করেন। পরে ২০ নভেম্বর কান্দরায় রাজ্যের তৎকালীন পঞ্চায়েত মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের সভায় একই মঞ্চে দু’জনকে দেখাও যায়।
নিহত নেতা
কৃপাসিন্ধু সাহা। |
তৃণমূল সূত্রের খবর, তোলাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় কান্দরায় সাধারণ মানুষজন কৃপাসিন্ধুর পাশে দাঁড়ান। তাই মীমাংসা হলেও এলাকায় ক্ষমতার দখল কার্যত চলে গিয়েছিল কৃপাসিন্ধুর হাতে। স্থানীয় একটি উৎসবের সম্পাদকও হন তিনি। এ নিয়ে দু’পক্ষের মন কষাকষি চলছিলই। গত শুক্রবার কান্দরায় তৃণমূলের পার্টি অফিস তৈরির সময়ে মজুরি দেওয়াকে কেন্দ্র করে দু’জনের মধ্যে প্রকাশ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সেখানে উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল সমর্থকদের কথায়, “কৃপাসিন্ধুদা হারা শেখের কাছে তোলাবাজির সমস্ত টাকার হিসেব চান। টাকা ফেরত না দিলে দলের উচ্চ মহলে জানাবেন বলেও জানিয়ে দেন।” প্রসঙ্গত, গত অগস্টে পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর প্রকাশ্যে হারাকে তোলাবাজি বন্ধ করতে বলেন। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা জাহের শেখ এ দিন বলেন, “তোলাবাজি বন্ধ করতে গিয়েই কৃপাসিন্ধুকে প্রাণ দিতে হল।” কান্দরার তৃণমূল নেতা বাচ্চু রায়ের দাবি, “হারা শেখের দুর্নীতি, অসামাজিক কাজকর্মের প্রতিবাদ করতাম আমরা। সে জন্য আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছিল। এ বার কৃপাসিন্ধুকে প্রাণ দিতে হল।”
কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক সাহানেওয়াজ শেখ বলেন, “কৃপাসিন্ধু সৎ মানুষ ছিলেন। তাঁকে যাঁরা মেরেছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।” পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। খুনের কারণ জানার চেষ্টা চলছে।” |