শ্রমিক অসন্তোষের কথা জানিয়ে বাগানে লক আউট বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চলে গেলেন মালিক। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটে কার্শিয়াংয়ের পানিঘাটা চা বাগানে। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন কর্মহীন হয়ে পড়া চা বাগানের ৯৭৫ জন কর্মী। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার চা শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে চা বাগানের গেটের সামনে দীর্ঘসময় ধরে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। অবিলম্বে চা বাগান খোলার ব্যবস্থা না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন মোর্চার চা শ্রমিক সংগঠন। অভিযোগ, শীতের মরসুমে চা বাগান থেকে আয় হয় খুব সামান্য। এই কারণেই মিথ্যে অভিযোগ তুলে বাগান বন্ধ করেছেন মালিকপক্ষ। ২০০৫ ও ২০০৮ সালেও শীতের মরসুমে একইরকম অভিযোগ তুলে চা বাগান বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “কী কারণে মালিক পক্ষ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চা বাগান যাতে ফের দ্রুত চালু করা যায় সে ব্যপারে শ্রম দফতররের যুগ্ম কমিশনারকে দ্রুত বৈঠক ডেকে উদ্যোগ নিতে বলব।” কার্শিয়াংয়ের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নরবু ভুটিয়া বলেন, “শ্রমিক অসন্তোষ ও খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে ওই বাগানের মালিকপক্ষের তরফে থানায় লিখিত কাগজ জমা দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” চা বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধিত মজুরির জন্য গত কয়েক মাসে চা বাগানের কর্মীদের প্রচুর টাকা মালিক পক্ষের কাছে পাওনা । ওই টাকার দাবি করে গত শনিবার চা বাগানে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকরা। গোর্খা জন মুক্তি মোর্চার চা শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে দীর্ঘক্ষণ বাগানের সহকারী ম্যানেজারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান কর্মীরা। তাঁরা জানান, চুক্তি অনুযায়ী বর্ধিত মজুরির অর্ধেক টাকা বড়দিনের আগে এবং বাকি অর্ধেক টাকা হোলির আগে দেওয়ার কথা ঠিক হয়। বড়দিনের আগে টাকা না পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখান। রবিবার চা বাগান বন্ধ ছিল। সোমবার বড়দিনের জন্য বাগান বন্ধ রাখা হয়। ওই দিন বিকালে চা বাগান মালিক পক্ষের তরফে পানিঘাটা থানায় লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে, শ্রমিক অসন্তোষ এবং খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা বাগান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। মোর্চার চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা গীতমান তামাং বলেন, “বাগান বন্ধ করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ২৫ ডিসেম্বরের আগে চুক্তি অনুযায়ী পাওনা চেয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সেই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। আসলে শীতের মরসুমে লাভের পরিমাণ থাকে না বললেই চলে, এই কারণে মালিক পক্ষ বাগান বন্ধ দেয়। এর আগেও দুই বার ওই ঘটনা ঘটেছে। বৃষ্টির সময় নানা আশ্বাস দিয়ে কর্মীদের কাজ করানো হয়। প্রচুর পরিমাণ লাভও করেন মালিকপক্ষ। কিন্তু শীতের সময় তারা দায়িত্ব নিতে চান না। এটা মানা যাবে না। এ বারে সাধারণ শ্রমিকদের সামনে চুক্তি করতে হবে।” এদিন সকালে শ্রমিকরা গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। আইএনটিউসির দার্জিলিং জেলা নেতা অলোক চক্রবর্তী বলেন, “এভাবে বাগান বন্ধ মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত আলোচনা করে যাতে বাগান ফের চালু করা হয় সে ব্যপারে প্রশাসনে দাবি জানাব।” |