পঞ্চায়েতের অনুমতি ছাড়াই খালের উপর দিয়ে রাস্তা তৈরির অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার-২ ব্লকের কামারপোল গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূষণা গ্রামের। ওই রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ এমনকী, পঞ্চায়েত সদস্যকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ালে মহকুমাশাসক এবং মহকুমা পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লকের কামারপোল গ্রাম পঞ্চায়েতে ভূষণা গ্রামের কাছে স্থানীয় বাসিন্দা আতিয়ার দপ্তরির বিঘাখানেক জমি রয়েছে। কামারপোল খালের উল্টোদিকের ওই জমিতে বেশ কিছুদিন ধরেই একটি পেট্রোল পাম্প তৈরির কাজ চলছে। পাম্পে গাড়ির যাতায়াতের জন্য প্রায় শুকিয়ে যাওয়া ওই খালের উপর মাটি ফেলে দু’দিকের রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয় বেশ কিছুদিন আগে। খালের জল নিকাশির প্রয়োজনে মাটির নীচে পাইপ বসানো হয়। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া এ ভাবে খাল বুজিয়ে রাস্তা তৈরিতে প্রথম থেকেই আপত্তি জানাতে থাকেন স্থানীয় মানুষ। তার উপর যথাযথ পাইপ বসিয়ে উপযুক্ত নিকাশির ব্যবস্থা না করায় তাঁদের ক্ষোভ চরমে ওঠে। |
অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীরা। |
সোমবার সকালে ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক ঋষি হালদার এবং কৃষক সমিতির সভাপতি আবুবক্কর মোল্লার নেতৃত্বে এলাকার শ’দুয়েক বাসিন্দা খাল বুজিয়ে রাস্তা তৈরির প্রতিবাদে সরিষা-ফলতা রোডের ভূষণা মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন। চলে বিক্ষোভ। পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে তখনকার মতো বিষয়টি মিটিয়ে দেয়। ওই সময়েই কামারপোল গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্য হারান মণ্ডলের সঙ্গে পাম্প তৈরির লোকজনের বচসা বাধে। হারানবাবুকে মারধর করা হয়েছে বলে খবর রটলে শ’তিনেক গ্রামবাসী লাঠিসোটা, ভোজালি নিয়ে ওই নির্মাণকর্মীদের উপরে চড়াও হন। তাঁদের মধ্যে মহিলারাও ছিলেন। হামলাকারীরা নিমার্ণকাজের যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে মহকুমাশাসক, এসডিপিও বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।
হারানবাবুর অভিযোগ, “পঞ্চায়েতের কোনও অনুমতি ছাড়াই ওই খাল বুজিয়ে রাস্তা তৈরি হচ্ছিল। কেন এটা করা হচ্ছে তা জানতে চাওয়ায় পাম্পের নির্মাণকর্মীরা আমার উপরে চড়াও হয়।” ঋষিবাবু বলেন, “খাল বুজিয়ে রাস্তা তৈরির সময় জল নিকাশির জন্য সরু পাইপ বসানো হয়েছে। এতে জল নিকাশি ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। খাল বোজানোর পরিবর্তে যদি সেতু তৈরি করে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হত তা হলে নিকাশির সমস্যা হত না।” |
আবু বক্করের বক্তব্য, “ওই খালের জল স্থানীয় চাষের জমিতে সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই নিকাশি ব্যবস্থা যাতে যথাযথ থাকে সে জন্য নির্মাণকর্মীদের বলা হয়েছিল। কিন্তু ওরা তা শোনেনি।” অন্যদিকে, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই আতিয়ার দপ্তরি বলেন, “আমরা বড় পাইপ বসিয়ে তার উপর মাটি ফেলে রাস্তা করছিলাম। এতে জল নিকাশির সমস্যা হবে না। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সিপিএম স্থানীয় লোকজনকে আমাদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছে।” খাল বুজিয়ে রাস্তা তৈরিতে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাওয়া হলে আতিয়ার বলেন, “এ ব্যাপারে অনুমতি রয়েছে।” যদিও ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “ওই রাস্তা তৈরির জন্য কোনও অনুমতিই নেওয়া হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “খাল বুজিয়ে নির্মীয়মাণ ওই রাস্তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কংগ্রেস পঞ্চায়েত সদস্যকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে।”
|