খড়দহে বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর ঘটনায় আহতদের মধ্যে এক জন মঙ্গলবার মারা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, তার নাম ভ্রমর দাস ওরফে ভোমরা (৩২)। পুলিশের খাতায় সে সমাজবিরোধী বলেই চিহ্নিত।
তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছিলেন, দু’দল সমাজবিরোধীর মধ্যে আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের জেরেই রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত খড়দহের বাবুঘাট এলাকায় বোমাবাজি এবং গুলি চলেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা যায়, ভোমরার মৃতদেহ নিয়ে তৃণমূলের দলীয় পতাকা মোটরবাইকে বেঁধে শোকমিছিল বেরিয়েছে। টিটাগড়ের টাটা গেট থেকে ব্যারাকপুরের রাসমণি ঘাট পর্যন্ত ওই মিছিলে ছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় কয়েক জন নেতা-কর্মীও। পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্সের পাহারায় মিছিল পৌঁছয় শ্মশানে। সেখানে যান টিটাগড় পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা প্রশান্ত চৌধুরী।
ঘটনাচক্রে এ দিনই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিধায়কদের ডেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, দলে সমাজবিরোধীদের ঠাঁই দেওয়া চলবে না। এই ব্যাপারে দলীয় জনপ্রতিনিধিদের রীতিমতো সতর্ক করে দেন তিনি। উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল সভাপতি তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘দিদি বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। আমাদের সঙ্গে এ দিন সকালেই কথা বলেছেন। এই ধরনের ঘটনাকে দল কখনও প্রশ্রয় দেয় না। দলের নাম ব্যবহার করে বোমাবাজি, গুন্ডামি বা অন্য ধরনের অসামাজিক কাজ করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’
কে এই ভোমরা?
পুলিশ জানাচ্ছে, ভোমরা খড়দহ এলাকায় জুয়ার বোর্ড চালাত। তার নামে একাধিক দুষ্কর্মের অভিযোগ আছে। রবিবার রাতের বোমাবাজিতেও জড়িত ছিল সে।
ভোমরা যদি সমাজবিরোধী হয়ে থাকে, তা হলে তৃণমূল নেতারা তার দেহ নিয়ে শোকমিছিলে এবং শ্মশানে গেলেন কেন? সেই মিছিলে পুলিশের কড়া পাহারাই বা কেন?
টিটাগড় পুরসভার চেয়ারম্যান প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই ভোমরা আমাদের হয়ে কাজ করত। বিধানসভা এবং পুরসভা নির্বাচনেও আমাদের দলের হয়ে কাজ করেছিল। তাই শ্মশানে গিয়েছিলাম।” কিন্তু বিধায়ক নির্মলবাবু বলেন, ‘‘দল থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও সমাজবিরোধীর মৃত্যুতে দল মিছিল করবে না। দলের পতাকা নিয়ে কেউ শোকমিছিল করে থাকলে দল খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।’’
ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘ভোমরা স্থানীয় দুষ্কৃতী বলেই জানতে পেরেছি। তবে ওই মিছিল ঘিরে যাতে কোনও হিংসাত্মক ঘটনা না-ঘটে, সেই জন্যই পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। পুলিশ পুরো পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে।’’
দলীয় কোন্দল না-থামালে খড়দহের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক অর্জুন সিংহ, পার্থ ভৌমিক, শীলভদ্র দত্তদের বক্তব্য, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই মতবিরোধ মেটানো যায়। দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিলে সেটা রাজনীতি এবং সমাজের পক্ষে ক্ষতিকরই হয়। তৃণমূলের সব স্তরের নেতাদের নিয়ে অবিলম্বে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছেন জেলা সভাপতি। |