|
বিমলকুমার গিরি
প্রধান শিক্ষিক |
|
নদীনালায় ঘেরা সুন্দরবন অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম কেদারপুর। ১৯৫২ সালে জনাকয়েক বিদ্যোৎসাহী ও শিক্ষানুরাগীর ঐকান্তিক চেষ্টা ও নিরলস কর্মক্ষমতায় শিক্ষার আলোকে সবর্ত্র ছড়িয়ে দিতে জন্ম হয়েছিল এই কেদারপুর রাম-নন্দ উচ্চ বিদ্যালয়-এর। উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ ও বাতাবরণ তৈরি। যা আজও নিবিষ্ট ভাবে করে চলেছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্কুলের এক পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে টলটলে মৃদঙ্গভাঙা নদী। নোনামাটিতে ম্যানগ্রোভের অরণ্যে স্কুলের চারপাশের পরিবেশ সত্যিই মনোরম। চারদিকে প্রাচীরঘেরা শিক্ষায়তনটি ফুলের বাগান, খেলার মাঠ, স্নানের ঘাট-সহ বিরাট বিরাট পুকুর, শান বাঁধানো বিশাল চাতাল ও সাংস্কৃতিক মঞ্চ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয়। দূরদূরান্ত থেকে অনেক ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শিক্ষকগণ বাড়ি থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করতে পারেন না। হস্টেলে থেকেই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এ দিক থেকে বেশ কিছুটা আশ্রমিক ধাঁচের এই বিদ্যালয় উদ্ভাবনী এবং মৌলিক চিন্তাশক্তির বিকাশ সাধনে সাহায্য করে। |
স্কুলে নিয়মিত পাঠচক্র, বিতর্ক, ক্যুইজ, সেমিনার প্রভৃতির আয়োজন করা হয়। সুন্দরবন অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষকগণ কাউন্সিলিংয়ে সহজে এই স্কুল নির্বাচন করেন না। ফলে অনেক শিক্ষকপদ খালি পড়ে আছে। গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ না পৌঁছনোয় ল্যাবরেটরির কাজকর্মে যথেষ্ট অসুবিধা হয়। যদিও বিদ্যালয়ের নিজস্ব জেনারেটরে সেই অভাব পূরণ করার জন্য যথাসম্বব চেষ্টা করা হয়। পানীয় জলের সমস্যাও প্রকট। তবু নানা সমস্যা সত্ত্বেও ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় স্কুলের দুই ছাত্র হিমাংশু শেখর রাউথ ও মানিক মোহন মিশ্র যথাক্রমে নবম ও পঞ্চম স্থান অধিকার করে বিদ্যালয়কে সম্মান এনে দিয়েছিল। অধ্যবসায় আর নিমানুবর্তিতা ছিল ওই সাফল্যের চাবিকাঠি। এখনও পর্যন্ত যা অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট শিক্ষক থেকে ছাত্রছাত্রীরা সকলেই। বহু কৃতী ছাত্রছাত্রী দেশে-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত থেকে বিদ্যালয়ের সুনামের সাক্ষ্য বহন করছে। বর্তমান যুগ ডট-কম, ই-মেলের যুগ। রজতজয়ন্তী ও সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এই বিদ্যালয় এখন হীরকজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে। বিদ্যালয়ে এখনও কম্পিউটার শিক্ষা চালু করা যায়নি। ফলে ছাত্রছাত্রীরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির আধুনিক ব্যবহার থেকে বঞ্চিত। তবে চেষ্টা চলছে শীঘ্রই এলাকায় বিদ্যুতের বন্দোবস্ত করে এই সমস্যা মেটানোর। |
আমার চোখে |
সৌরভ করণ
ক্লাস টেনের ফার্স্ট বয় |
|
সালটা ২০০৬। একরাশ ভয় নিয়ে প্রাইমারি স্কুল থেকে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। ধীরে ধীরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভালবাসায় ও উৎসাহে সমস্ত দ্বিধা, ভয় মন থেকে ঝেড়ে ফেলেছিলাম। এখনও পর্যন্ত যে কোনও সমস্যা হলে তাঁদের কাছে ছুটে যাই। তাঁরাও যতটা সম্ভব সাহায্য করেন। এখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্র। স্কুলের কিছু কিছু সমস্যা আমাদের পঠনপাঠনে সমস্যা তৈরি করছে এটা সত্যি। যেমন, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব আছে। বিদ্যুতের অভাবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়নি। খেলার মাঠ আছে, কিন্তু খেলাধুলার যেমন শিক্ষক নেই, তেমনই প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। উন্নত ল্যাবরেটরি নেই। লাইব্রেরি না থাকায় রেফারেন্স বইয়ের অভাব অনুভূত হয়। কিন্তু এত সব সমস্যার মধ্যেও যখন ভাবি একদিন সময়ের নিয়মে এই স্কুল, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ছেড়ে চলে যেতে হবে, তখন কষ্ট অনুভব করি।
|