তৃণমূল পরিচালিত দুই বাসকর্মী সংগঠনের মধ্যে বিবাদের জেরে নবদ্বীপ বাসস্ট্যান্ড থেকে বর্ধমান জেলার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে রয়েছে। বর্ধমানের বাসগুলি নাদনঘাট পর্যন্ত এসে থেমে যাচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বর বিকেল থেকে নবদ্বীপের লোকজনকে নাদনঘাট গিয়ে বর্ধমানের বাসে উঠতে হচ্ছে। তবে নাদনঘাটে খাল বিল উৎসব এবং জেলা যুব উৎসবের পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যার আশু সমাধানে উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত দিন পাঁচেক আগে। নবদ্বীপ-কালনা রুটের একটি বাসে কালনা থেকে আসা বাসকর্মীকে নামিয়ে দিয়ে তাঁর জায়গায় নবদ্বীপ থেকে একজন বাসকর্মীকে তুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপর থেকেই নবদ্বীপ বাসস্ট্যান্ডে আর ঢুকতে চায়নি বর্ধমান জেলার বাসগুলি। কালনা বাসস্ট্যান্ডের তৃণমূল কর্মী সংগঠনের সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দিন পাঁচেক আগে হঠাৎ করেই নবদ্বীপ বাসস্ট্যান্ড থেকে কালনার বাসে একজন কর্মীকে তুলে দেওয়া হয়। আমাদের সঙ্গে তা নিয়ে কেউ আলোচনারও প্রয়োজন মনে করেননি। কিন্তু ওই বাসকর্মীকে নিয়োগ করার প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের কর্মীদের মারধরের হুমকি দেওয়া হয়।” তিনি জানান, কালনা ছাড়াও বর্ধমানের অন্যত্র থেকে আসা বাসগুলি তখন নবদ্বীপ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত না গিয়ে রেলগেট পর্যন্ত যাতায়াত করছিল। অঞ্জনবাবু বলেন, “কিন্তু সেখানে গিয়েও হুমকি দিয়ে আসে নবদ্বীপের কিছু ছেলে। আমাদের একটি বাস আটকেও রাখা হয়। তাই নিরাপত্তার কারণেই আমরা নাদনঘাট মোড় পর্যন্ত বাস নিয়ে যাচ্ছি।” নবদ্বীপ বাসমালিক সমিতির সম্পাদক রতন চৌধুরী বলেন, “নবদ্বীপ-কালনার মধ্যে ২৮টি বাস চলে। তার মধ্যে বেশিরভাগ বাসেরই মালিক বর্ধমানের বাসিন্দা। এক্ষেত্রে প্রথা হয়ে রয়েছে যে, এই রুটে কালনার বাসকর্মীদেরই নেওয়া হয়।” তবে নবদ্বীপের পুরপ্রধান তৃণমূলের বিমানকৃষ্ণ সাহার দাবি, “প্রথা হল, যে বাস রাতে যে বাসস্ট্যান্ডে থাকে, সেই বাসে ওই বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি এলাকা থেকেই কর্মী নিতে হয়। অথচ কালনা-নবদ্বীপ রুটে আমাদের এখানকার কোনও কর্মীকেই নিয়োগ করা হয় না। আমরা তাই একজন বাসকর্মী নিয়োগ করেছিলাম। তাতেই ওরা বাসস্ট্যান্ডে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। নবদ্বীপের কাউকেই ওঁরা বর্ধমানের বাসে কাজ করতে দিতে চান না।” অঞ্জনবাবুর অবশ্য পাল্টা দাবি, “এই অভিযোগ ঠিক না। যেমন কৃষ্ণনগর-কালনা রুটের সব বাসকর্মীই নবদ্বীপের বাসিন্দা। তেমনই জামালপুর-কালনা রুটে কালনার ছেলেরাই কাজ করে। এটাই বরাবর হয়ে আসছে।” নাদনঘাটের বিধায়ক স্বপন দেবনাথ বলেন, “আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।” পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণবাবুরও বক্তব্য, “বর্ধমানে দু’টি উৎসব চলছে। সেই উৎসবে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য নবদ্বীপ থেকে কালনা বা বর্ধমানের অন্য জায়গায় বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি আমরা।” |