মুর্শিদাবাদ শহর টাঙা ইউনিয়ন এবং মুর্শিদাবাদ টাঙা চালকদের তৃণমূল ও সিপিএম সমর্থিত দু’টি ইউনিয়নের সদস্যদের সংঘর্ষে জখম হন দু’পক্ষের ৮ সদস্য। তাদের মধ্যে তৃণমূলের ইউনিয়নের ৬ জন লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মুর্শিদাবাদ থানার আইসি ইন্দ্রজিৎ কুণ্ডু বলেন, “যাত্রী তোলাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ওই ঘটনায় দু’পক্ষই একে-অপরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ লালবাগ কলেজের কাছে লালবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে পর্যটকদের বাস দাঁড় করিয়ে টাঙায় যাত্রী তোলার চেষ্টা করেন তৃণমূলের টাঙা ইউনিয়নের সদস্যেরা। সিটুর ইউনিয়নের সদস্যরা তাতে আপত্তি জানান। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র মুর্শিদাবাদ ব্লক সভাপতি তপন রায় বলেন, “এর পরেই পুলিশ আমাদের বলে হাজারদুয়ারি প্রাসাদের উত্তর দিক থেকে যাত্রী তুলতে হবে। পুলিশ আমাদের সঙ্গে করেও নিয়ে যায়। কিন্তু তখনই যাত্রী তোলার সময়ে সিটুর ইউনিয়নের লোকজন আমাদের সদস্যদের বেধড়ক মারধর করে। এতে আমাদের ৬ জন টাঙা চালক জখম হন।” |
সিটুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা মুর্শিদাবাদ টাঙা চালক ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত দীপঙ্কর চক্রবর্তীর অবশ্য পাল্টা দাবি, “এদিন সকালে আমাদের ইউনিয়ন কার্যালয় দখল করতে আসে তৃণমূলের টাঙা ইউনিয়নের সদস্যরা। এমনকী আমাদের সদস্যদের আক্রমণও করে তারা। তখন আমাদের সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ওই ঘটনায় আমাদের দুজন সমর্থক গুরুতর জখম হন।”
তৃণমূলের ইউনিয়নের সদস্যরা এই দিন মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান-বিক্ষোভও করেন। মুর্শিদাবাদ পুর-এলাকার বেশ কয়েকটি মোড়ে পথসভাও করেন।
লালবাগে তৃণমূলের টাঙা ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা ৪৯। অন্য দিকে সিটুর এই ইউনিয়নের সদস্য প্রায় ২০০। অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে সিটুর ইউনিয়নের সদস্যেরা হাজারদুয়ারির উত্তর দিক থেকে পর্যটকদের টাঙায় তুলে নিতেন। তবে গত ২১ নভেম্বর পর্যটন মরসুম শুরুর আগে প্রশাসনিক স্তরে যে বৈঠক হয়েছিল, তাতেও সিদ্ধান্ত হয়েছিল সব পক্ষই ওই হাজারদুয়ারি চত্বর থেকে টাঙায় যাত্রী তুলতে পারবে। কিন্তু প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্ত সিটুর বাধায় কার্যকরী হয়নি বলে অভিযোগ।
তারপরেই গত ২৫ ডিসেম্বর সকালে কলেজ মোড়ের কাছে সমস্ত বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা শুরু করে তৃণমূলের টাঙা ইউনিয়ন। তাতেই দু’পক্ষের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করে লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতি। তাতে মিটেও যায়। এর পরেও এদিনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় ক্ষুব্ধ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “দুই টাঙা ইউনিয়নের রেষারেষির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন শিল্প। পর্যটকদেরও হেনস্থা হতে হচ্ছে। পর্যটকদের স্বার্থে বিষয়টি আমরা মেনে নিতে পারছি না। প্রশাসনিক স্তরে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।”
লালবাগ মহকুমাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষ বলেন, “আগামী ২৯ ডিসেম্বর বৈঠক ডাকা হয়েছে। যাতে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে সমাধান সূত্র বের করা যায়।” |